শিরোনাম
ডিজে থেকে অস্ত্র ব্যবসায়ী
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬, ২০:০৩
ডিজে থেকে অস্ত্র ব্যবসায়ী
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

তারেক আহমেদ অনিক (২৮)। উত্তর বাড্ডার জিএম বাড়ির সচ্ছল পরিবারের সন্তান। পিতার নাম আবু তারেক আহমেদ। অনিক ঢাকার মানারাত স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ও পেশায় একজন ডিজে (ডিস্কো জকি)। তবে সেই অনিকই এখন একজন সন্ত্রাসী ও অস্ত্র ব্যবসায়ী। সম্প্রতি র‌্যাবের অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।


র‌্যাব জানায়, অনিক ডিজে পেশায় আসার পর মাদক ও বিভিন্ন নারীর সান্নিধ্যে আসেন। এক পর্যায়ে তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়, নিজেও শুরু করেন মাদক ব্যবসা।অল্প সময়ের মধ্যে বাড্ডা এলাকায় মাদক ব্যবসা তার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এতে বিপুলি পরিমাণ অবৈধ টাকার মালিক হয়ে যান অনিক। আর মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অনিক ক্রমেই ওয়ে ওঠেন অস্ত্র ব্যবসায়ী।


র‌্যাব জানায়, অস্ত্র কেনার পরিপ্রেক্ষিতে অনিক বিভিন্ন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সাথে পরিচত হয়ে ওঠেন। ধীরে ধীরে মাদক ব্যবসার পাশাপাশি অস্ত্র ব্যবসাও শুরু করেন। একপর্যায়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করেন ঢাকার আশপাশ এলাকায়।


এদিকে, রবিবার রাতে অনিকের কয়েক সহযোগীকে আটক করে র‌্যাব। তারা হলো- মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার ঠাকুরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মাদু শেখের ছেলে মো. বাহেস শেখ (৩২), একই উপজেলার বাউলঝুড়ি গ্রামের বাসিন্দা মো. আলী হায়দার মোল্লার ছেলে মো. সোহেল মোল্লা (২৪), পাইলা গ্রামের বাসিন্দা মো. আনসার শেখের ছেলে মো. রুবেল শেখ (২৪), নোয়াখালীর জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাছপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আজিজুল ইসলামের ছেলে মো. আব্বাস মিয়া (২৫) ও ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার দক্ষিণ তারাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুল হক ফরাজীর ছেলে মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ ওরফে পানি আরিফ (২৫)।


এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি অবৈধ বিদেশী পিস্তল, ৩৮ রাউন্ড গুলি ও ৯টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।


তবে অনিককে আটক করা সম্ভব হয়নি। অনিক বাদশা নামের আরেক সহযোগীকে নিয়ে পালিয়ে যান। তবে তাকে আটক করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব ১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ।


তিনি জানান, ইতোমধ্যে অনিক রাজধানীতে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০টির মতো অস্ত্র বিক্রি করেছেন। তবে যাদের কাছে বিক্রি করেছেন তাদের নাম পাওয়া গেছে।


এক প্রশ্নের জবাবে লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, অনিক জঙ্গিদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতো কি না তা এখনো পরিস্কার নয়। এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে হাত বদলের মাধ্যমে জঙ্গিদের কাছে সেই অস্ত্র যেতেও পারে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।


তিনি জানান, পালিয়ে যাওয়া অনিকের সহযোগী বাদশা পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান। তিনি অবৈধ অস্ত্রের চালান সংগ্রহ করতেন এবং ক্রেতাদের কাছে তা পৌঁছে দিতেন। এছাড়াও বাদশা অস্ত্রের চালানগুলো পানি আরিফের বাসায় লুকিয়ে রাখতেন। আরিফের বাসাও বাড্ডার জিএম বাড়ি সাতারকুল রোড এলাকায়।


র‌্যাবের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী অনিকের সাথে আরিফ খাবারের পানির ব্যবসা করতেন। এছাড়াও অনিকের সাথে মেহেদী, শাওন, রনি, মতিন, বাবুসহ ১৫ থেকে ২০জন রয়েছেন।


আরেক প্রশ্নের জবাবে তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, অনিক এলাকায় নিজেকে আইন-শৃঙ্কলা বাহিনীর সোর্স বলে পরিচয় দিতেন।


প্রসঙ্গত, অনিক শুধু অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী নয়। তিনি বাড্ডা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। এছাড়াও এলাকায় খাবারের পানির ব্যবসা, স্থানীয় নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহে প্রভাব বিস্তার, বালুর গদি দখল, জুয়া, মাদক ব্যবসা, বিদেশী মদ-বিয়ার বিক্রি, দেহ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছিলেন।


বিবার্তা/খলিল/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com