শিরোনাম
গুলশান হামলায় টাকা ও অস্ত্র যোগান দেয় রিপন
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:১৪
গুলশান হামলায় টাকা ও অস্ত্র যোগান দেয় রিপন
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

গুলশানে হলি আর্টিজান হামলার অর্থ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহ করেছিলো জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ’র (জেএমবি) শুরা সদস্য মো. মামুনুর রশিদ ওরফে রেজা। হলি আর্টিজান হামলার মামলায় আসামিদের আদালতে নিয়ে যাওয়া-আসার সময় প্রিজনভ্যানে হামলা করে তাদের ছিনতাই করার পরিকল্পনাও ছিল তার।


শনিবার রাতে রিপনকে গাজীপুর থেকে আটক করা হয়। এরপর রবিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান মুফতি মাহমুদ খান।


মুফতি মাহমুদ খান বলেন, রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার জন্য ৩৯ লাখ টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছিলো মো. মামুনুর রশিদ ওরফে রিপন ওরফে রেজাউল করিম ওরফে রেজা। তার দায়িত্ব ছিল অর্থ সংগ্রহ করা, সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহ করা।


র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, সংগঠনের সিদ্ধান্তে গ্রেপ্তারকৃত এই অন্যতম শুরা সদস্য রিপনের নেতৃত্বে একটি দল ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত গিয়ে এই অর্থ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে সেগুলো হামলার মূলহোতা সরোয়ার জাহানের কাছে পাঠায় সে। এছাড়া আটকের সময় রিপনের কাছ থেকে একটি ডায়েরি, চারটি খসড়া মানচিত্র এবং ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়।


মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ২০১৪ সালে ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাই পরিকল্পনা করেছিল তারা। ত্রিশালের মতো আরেকটি ঘটনা ঘটিয়ে জঙ্গিদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিল। মূলত হলি আর্টিজান হামলা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিদের ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ছিল তাদের।


তিনি বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পর প্রায় দেড় বছর সে আত্মগোপনে ছিল। এ সময় সে দেশের বাহিরে পার্শ্ববর্তী কোনো একটি দেশে ছিল। এরপর সেখান থেকে ২০১৮ সালে দেশে ফিরে এসে ভেঙে যাওয়া জেএমবিকে পুনর্গঠনের কাজ করছিল সে। একইসঙ্গে হলি আর্টিজান হামলার মামলায় আসামিদের আদালতে নিয়ে যাওয়া-আসার সময় প্রিজনভ্যানে হামলা করে তাদের ছিনতাই করার পরিকল্পনা ছিল তার।


মুফতি মাহমুদ খান বলেন, প্রাথমি জিজ্ঞাসাবাদে রিপন জানিয়েছে, হলি আর্টিজান হামলার আগে রিপন প্রায় ৩৯ লাখ টাকা সারওয়ার জাহানকে দিয়ে হলি আর্টিজান হামলার পরিকল্পনা ও অস্ত্র সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে জানায়। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলা তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সংঘটিত হয়েছে।


জঙ্গি হামলার অধিকাংশই রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিল উল্লেখ করে মুফতি মাহমুদ বলেন, বিভিন্ন হামলা পরিচালনার আগে তারা মহড়া করে অনুশীলন করতো। এ ধরনের একটি অনুশীলন মহড়ার সময়ে দুর্ঘটনায় ২০১৬ সালের এপ্রিলে বগুড়ায় শুরা সদস্য ফারদিন ও অন্য এক সক্রিয় জঙ্গি সদস্য তারিকুল ইসলাম জুয়েল নিহত হয় বলেও জানায় রিপন।


রিপনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মুফতি মাহমুদ আরও বলেন, ২০১৩ সালে বগুড়ার সাইবারটেক নামক কম্পিউটার প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অবস্থায় রিপনের সঙ্গে ডা. নজরুলের পরিচয় হয়। নজরুলের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়েই রিপন জঙ্গিবাদে জড়ায়। এরপর তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করার। সে ৮ লাখ টাকা সংগ্রহ করে সংগঠনকে দেয়। এর মধ্যে স্থানীয় একটি বিকাশের দোকান লুট করে ৬ লাখ টাকা, সিগারেট বিক্রেতার কাছ থেকে ছিনতাই করে ১ লাখ টাকা ও অন্য এক ঘটনায় ১ লাখ টাকা ছিনতাই করে সে সংগঠনকে দেয়। শুধু তাই নয়, গুলশান হলি আর্টিজান হামলার আগের দিন তারা বারিধারা একটি বাড়িতে কয়েকজন মিলে হলি আর্টিজানে হামলার পরিকল্পনাও করেছিল বলে জানান র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।


২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে দুই পুলিশসহ দেশি-বিদেশি ২২ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হন। অভিযানে এক জাপানি ও দুজন শ্রীলঙ্কানসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই বছরের ৪ জুলাই গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ।


এ মামলার মোট আসামি আটজন। এরমধ্যে ছয়জন কারাগারে রয়েছে। বাকি দুজন আসামি পলাতক ছিলো। এরমধ্যে গতকাল মামুনুর রশিদ রিপনকে র‌্যাব গ্রেফতার করে। জেএমবির অন্যতম শুরা সদস্য রিপন বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম থানার শেখেরমাড়িয়া গ্রামের মৃত নাসির উদ্দিনের ছেলে। অন্য আসামি শহীদুল ইসলাম খালেদ এখনো পলাতক।


বিবার্তা/খলিল/কাফী


>>হলি আর্টিজানে হামলা: অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহকারী গ্রেফতার

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com