শিরোনাম
সাংবাদিক সুবর্ণা নদী হত্যায় আসামি মিলন গ্রেফতার
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:১৮
সাংবাদিক সুবর্ণা নদী হত্যায় আসামি মিলন গ্রেফতার
পাবনা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

পাবনার সাংবাদিক সুবর্ণা আক্তার নদী হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত তিন নম্বর আসামি শামসুজ্জামান মিলনকে (৪০) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। শনিবার দিবাগত রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব-১২ পাবনা ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কামান্ডার মো. রুহুল আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।


গ্রেফতারকৃত শামসুজ্জামান মিলন পাবনা শহরের গোপালপুর এলাকার মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে। তিনি সুবর্ণা নদীর প্রাক্তন শ্বশুর আবুল হোসেনের মালিকানাধীন ইড্রাল ফার্মাসিউটিক্যাল (ইউনানী) এর ম্যানেজার। রাজধানীর পুরান ঢাকার আরমানিটোলা থেকে শনিবার রাতে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১২। মিলন নদী হত্যার ৩ নম্বর আসামি ও নদীর সাবেক স্বামী রাজিবের সহযোগী বলে জানা গেছে।


আজ রবিবার দুপুরে র‌্যাব পাবনা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১২ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আব্দুল আহাদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার রাত ১০টার দিকে পুরান ঢাকার আরমানিটোলা থেকে সংবাদিক নদী হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি মিলনকে গ্রেফতার করা হয়।


উল্লেখ্য, সাংবাদিক নদীর প্রথম স্বামী জীবনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর মেয়ে জান্নাতকে (৭) নিয়ে মায়ের সঙ্গে বসবাস করতেন। এরই মধ্যে ২০১৬ সালের ৬ জুন ইড্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস এবং শিমলা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক আবুল হোসেনের ছেলে রাজিবুল ইসলাম রাজিবকে তিনি ভালোবেসে বিয়ে করেন।


গত বছরের ৩১ মে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক না দেয়ায় স্বামী রাজিব বাড়ি থেকে বের করে দেন বলে নদী অভিযোগ করেন। এর পর গত বছরের ৪ জুন তিনি পাবনার শিশু ও নারী নির্যাতন দমন আদালতে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে আসামি করে মামলা করেন।


এ মামলা চলাকালীন গত বছরের ২২ জুলাই নদী এক সংবাদ সম্মেলনে তার জীবননাশ হতে পারে বলে সাংবাদিকদের কাছে তার উদ্বেগের কথা জানান।


নদীর বড় বোন চাম্পা খাতুন বলেন, গত ২৮ আগস্ট ছিল ওই মামলার সাক্ষীদের বক্তব্য শোনার দিন। এদিন নদীর পক্ষে ভালোভাবে সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। ওই দিনই রাতে মুখ বাঁধা কয়েকজন দুর্বৃত্তের এলাপাতাড়ি চাপাতির আঘাতে নদী নির্মমভাবে খুন হন।


রাজিবের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে পাবনা শহরের রাধানগরের ভাড়া বাসায় তার সাত বছরের একমাত্র মেয়ে জান্নাত, বড় বোনের ছেলে আলিফ হোসেন (৭) এবং মা মর্জিনা বেগমকে নিয়ে বাস করতেন সুবর্ণা নদী। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া সামান্য জমি বিক্রি করে পাবনা প্রেসক্লাব গলিতে নতুন অফিস নেন এবং কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যামেরাসহ অন্য জিনিসপত্র কেনেন।


সুবর্ণা নদী কাজ করতেন আনন্দ টিভিতে এবং নিজে জাগ্রত বাংলা নামে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালাতেন। মঙ্গলবার এ অফিস থেকেই আনুমানিক রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাসায় ফেরার পথে বাসার গেটের সামনে পৌঁছলে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা চার-পাঁচজনের একদল দুর্বৃত্ত নদীর ওপর হামলা চালায়।


তারা চাপাতি দিয়ে নদীর ঘাড়ে-পিঠে ও গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলাপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।


হত্যার পর দিন নদীর মা মর্জিনা বেগম ইড্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস ও শিমলা ডায়াগনস্টিকের মালিক এবং নদীর সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেন, তার ছেলে নদীর সাবেক স্বামী রাজিব, রাজিবের সহকারী মিলনসহ অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনকে আসামি করে পাবনা থানায় মামলা করেন। এ মামলার পর আবুল হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।


এর আগে হত্যার রাতেই আবুল হোসেনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল। আবুল হোসেন এ সময় তার অফিসে ছিলেন বলে পুলিশ সাংবাদিকদের জানান।


গত বৃহস্পতিবার বিকালে গ্রেফতার আবুল হোসেনকে পাবনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক অরবিন্দ সরকার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদ হোসাইন শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।


কিন্ত ওই তিন দিনের রিমান্ডে আবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ হত্যাকাণ্ড-সংক্রান্ত ইতিবাচক কোনো তথ্য পায়নি বলে জানা গেছে।


গত রবিবার বিকালে আবুল হোসেনকে আদালতে ফের হাজির করা হয়। তবে তার পুনরায় রিমান্ড চাওয়া হয়নি। এখনো গ্রেফতার হয়নি সুবর্নার প্রাক্তন স্বামী ও মামলার এক নম্বর আসামি রাজিব হোসেন।


বিবার্তা/খলিল/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com