শিরোনাম
চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভার্সিটিছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০১৮, ২১:০৮
চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভার্সিটিছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

চাকুরি ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে রাজিবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। এর ফলে দু'বার গর্ভবতীও হয়েছে ছাত্রীটি। পরবর্তীতে স্ট্যাম্পফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেছেন।


মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, রাজিবুল ইসলাম (৫৩) মেডিটারেনিন শিংপিং কম্পানির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর। বর্তমানে তিনি গুলশান ২ এর ২৪ নম্বর রোডের ৩৫ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা। তিনি বরিশালের বগুড়া রোডের আলী ম্যানশনের বাসিন্দা নূরুল ইসলামের ছেলে। রাজধানীর কাকরাইল ২৬/১ এর এইচ আর ভবনে তার কর্মস্থল।


অভিযোগকারী ছাত্রী জানান, ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই রাজিবুল ইসলামের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় ওই ছাত্রীর। এক পর্যায়ে ওই ছাত্রীর ক্যারিয়ার সম্পর্কে জানতে চায় রাজিবুল। এ সময় চাকুরির সন্ধান করছেন এবং ছাত্রীর পিতা মৃত বলে রাজিবুলকে জানান তিনি। এরপর তার (রাজিবুলের) কথামত একটি সিভি প্রেরণ করেন রাজিবুলের ই-মেইলে। ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট চাকরির ইন্টারভিউ দিতে কাকরাইল ২৬/১ এর এইচ আর ভবনে যান তিনি। এ সময় রাজিবুল তার ইন্টারভিউ নেন এবং তিন-চার মাস পর চাকুরি দেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন।


তিনি জানান, এর পর থেকে প্রায় সময় ফেসবুকের মেসেঞ্জারে কথা হতো দু’জনের। এক পর্যায়ে ২০১৬ সালের ৫ নভেম্বর দুপুরে কাকরাইলের সুং গার্ডেন নামক একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করেন দু’জন। সেদিনও চাকুরি দেয়ার আশ্বাস দেয় রাজিবুল। এরপর থেকেই ফোনে নিয়মিত কথা বলা শুরু করেন তারা এবং রাজিবুল তার অফিসে প্রায় দিন ডেকে নিত ওই ছাত্রীকে। একই বছরের ২ ডিসেম্বর ''ব্যক্তিগত কথা আছে'' বলে ওই ছাত্রীকে নিয়ে বনানীর ১১ নম্বর রোডের একটি ফ্ল্যাটে চলে যান রাজিবুল। ওই ফ্ল্যাটে কেউ ছিল না। এ সময় রাজিবুল তার স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্সের প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে ওই ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। চাকুরি দিয়ে তাকে বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করার স্বপ্ন দেখান তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে মেয়েটিকে বনানীর ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে চাকুরী ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দু’বার ধর্ষণ করে রাজিবুল। এরপর প্রায়দিন তাকে ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে ধর্ষণ করতো রাজিবুল।


এক পর্যায়ে গর্ভবতী হয়ে পড়েন ওই ছাত্রী। এ সময় রাজিবুল তাকে গর্ভপাত করাতে বাধ্য করে। এরপর পর থেকে বিয়ে ও চাকুরির জন্য রাজিবুলকে চাপ দিতে শুরু করেন ওই ছাত্রী। এতে রাজিবুল সম্মতি জানিয়ে তার আগের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল বিয়ে করবে বলে জানায়। শুধু তা-ই নয়, ২০১৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তার প্রতিষ্ঠানে যোগদানের জন্য একটি যোগদানপত্র পাঠায় রাজিবুল। ১ মার্চ যোগদানের কথা থাকলেও যোগদানের পূর্বে রাজিবুল বাবা-মা অসুস্থ রয়েছেন, এমন অজুহাতে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিশ্চিত হতে রাজিবুলের অফিসে যান ওই ছাত্রী। এ সময় সিকিউরিটি গার্ড তাকে অফিসে প্রবেশে বাধা দেয় এবং চাকুরির বিষয়ে ই-মেইলে জানানো হবে বলে জানায়। তারপর মার্চ মাসের ১ তারিখ রাজিবুলের অফিসের ই-মেইল থেকে ওই ছাত্রীর ই-মেইলে একটি মেইল করা হয়। এতে বলা হয় যোগদানের তারিখ এক মাস পিছিয়ে এক এপ্রিল করা হয়েছে। পরবর্তীতে মার্চ মাসের শেষের দিকে ওই ছাত্রী রাজিবুলের অফিসের এডমিনের যোগাযোগ করে বিষয়টি ভুয়া বলে নিশ্চিত হন।


পরবর্তীতে রাজিবুল হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে জানায়, যোগদানপত্রের তারিখ অতিক্রম হওয়াতে নতুন করে যোগদানপত্র ইস্যু করা হবে। এরপর থেকে ওই ছাত্রীর মোবাইল নম্বর ব্লক করে দেয় রাজিবুল। পরে অন্য মোবাইল নম্বর থেকে রাজিবুলের মোবাইলে এসএমএস পাঠান ওই ছাত্রী। পরে সে যোগাযোগ করে চাকুরির আশ্বাস দিলেও বিয়ে করতে সময় লাগবে বলে জানায়। এরপর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে অন্য একটি নতুন কোম্পানিতে চাকরি দেয়ার আশ্বাস দেয় রাজিবুল। এতেও ব্যর্থ হয় সে। এক পর্যায়ে ওই ছাত্রী রাজিবুলের বড় ভাই ও মাকে বিষয়টি অবগত করেন। তখন অফিসে ডেকে নিয়ে রাজিবুল তার কাছ ক্ষমা চান। একই সাথে চাকুরি দেয়া এবং বিবাহ করার জন্য আরো সময় চান। এরপর থেকে ফের তিনি শারিরীক সম্পর্ক চালিয়ে যেতে থাকেন এবং ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করেন। কিন্তু ওইদিন চট্টগ্রাম চলে যান তিনি।


এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছাত্রী তার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার অনুরোধ করেন। তারপরও রাজিবুল সম্পর্ক চালিয়ে যান। সর্বশেষ গত ২৬ এপ্রিল রাজিবুল আমেরিকায় চলে যাবেন এমনটা জানিয়ে ২৫ এপ্রিল কাকরাইল অফিসে দেখা করতে বলে ওই ছাত্রীকে। তার কথামত তিনি অফিসে গিয়ে দেখা করেন। এ সময় বিয়ে না করার কারণ জানতে চান ওই ছাত্রী। কিন্তু এর উত্তর না দিয়েই উল্টো জোর করে তাকে ফের ধর্ষণ করে সে। এরপর ফের গর্ভবতী হয়ে যান তিনি। বিষয়টি রাজিবুলকে জানালে পর্ভপাত করার পরামর্শ দেন রাজিবুল।


এক পর্যায়ে ওই ছাত্রী মামলা দায়েরের কথা বললে, মামলা দিয়ে তাকে কিছুই করতে পারবে না বলে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরে ন্যায় বিচারের আশায় তিনি থানায় মামলা করতে গেলে মামলা রেকর্ড করে না পুলিশ, উল্টো তাকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। ওই পরামর্শ পেয়ে তিনি আদালতের আশ্রয় নেন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।


এ ব্যাপারে জানতে রাজিবুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা বলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। উল্টো এসএমএস করার জন্য একটি বার্তা পাঠান। পরবর্তীতে প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে এসএমএস করা হলেও তিনি ফিরতি এসএমএস পাঠাননি। পরে আবারো তার মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।


এদিকে, রাজিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। পরোয়ানাটি ইতোমধ্যে রাজধানীর গুলশান থানায়ও পৌঁছেছে। তবে পুলিশ এখনো তাকে গ্রেফতার করতে পারে নি।


শুক্রবার এ ব্যাপারে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিকিদ্দির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এখন ব্যস্ত একটু পরে ফোন দেন।’ পরে প্রায় এক ঘন্টা পর ফের ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।


বিবার্তা/খলিল/হুমায়ুন/সোহান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com