শিরোনাম
রাজধানীতে বখাটে কিশোরদের ৩০ গ্রুপ
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২১:০৩
রাজধানীতে বখাটে কিশোরদের ৩০ গ্রুপ
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীতে কিশোরদের কমপক্ষে ৩০টি গ্যাং নানা অপরাধে জড়িত বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে ওই অপরাধী চক্রের কিছু কিশোরকে গ্রেফতারও করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ওই গ্রুপগুলোর উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে, তার কিছু তথ্যও র‌্যাবের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীতে কিশোর অপরাধী চক্রের সূচনা হয় হয় উত্তরা থেকে। ওই এলাকায় ২০০১ সালে কাঁকড়া গ্রুপ নামে সংগঠিত হয় একদল বখাটে কিশোর। তাদের দেখাদেখি পরে ছোট-বড় আরো প্রায় ৩০টি কিশোর দুর্বৃত্তদলের উত্থান ঘটে।


বতর্মানে ওদের মধ্যে সক্রিয় রয়েছে কাঁকড়া গ্রুপ, জি ইউনিট, ব্ল্যাক রোজ, রনো, কে নাইট, ফিফটিন, ডিসকো বয়েজ, নাইনস্টার, নাইন এম এম বয়েজ, পোটলা বাবু, সুজন, আলতাফ, ক্যাসল বয়েজ ও ভাইপার গ্রুপ। ওই সব গ্রুপে ২০ থেকে ৩০ জন করে বখাটে রয়েছে।


জানা যায়, ২০১৫ সালে সবগুলো গ্রুপ এক হয়ে ফিফটিন গ্রুপে চলে আসে। কিন্তু পরে সৃষ্টি হয় আন্তঃকোন্দল। তখন আবার তারা ডিসকো, নাইন স্টার ও নাইন এমএম গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। আরো বিগবসসহ বিভিন্ন নামের আরো কয়েকটি গ্রুপও সৃষ্টি হয়।


র‌্যাব জানিয়েছে, একশ্রেণীর বখাটে কিশোর ও যুবক এসব গ্রুপের সদস্য। এদের কেউ কেউ রাজধানীর বিভিন্ন নামিদামী স্কুল-কলেজে 'লেখাপড়া' করে, এবার কেউ কেউ অশিক্ষিত। তাদের মধ্যে উচ্চ, মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা রয়েছে।


গ্রুপগুলোর প্রধান 'কাজ' হলো- এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, স্কুল-কলেজে র‌্যাগিং করা, স্কুল-কলেজ ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, ছিনতাই, উচ্চ শব্দ করে মোটরসাইকেল বা গাড়ি চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরী এবং ছিনতাই ও অশ্লীল ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করা।


র‌্যাব আরো জানায়, ওইসব গ্রুপের বেশিরভাগের অবস্থান রাজধানীর উত্তরা ও এর আশপাশ এলাকাগুলোতে। গ্রুপগুলোর নিজস্ব লোগো রয়েছে, যা তারা দেয়াল লিখন বা তাদের ফেসবুকে ব্যবহার করে থাকে। শুধু তাই নয়, তারা নিজেরা ড্রিংকস ও শীসা খাওয়ার ছবিও ফেসবুকে আপলোড করে। এছাড়াও ফেসবুকের মাধ্যমে এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে হুমকি দিয়ে থাকে এবং পরস্পরের আইডি হ্যাক করারও চেষ্টা করে।


উল্লেখ্য, গত ৬ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ১৩ নং সেক্টরে আদনান কবির (১৩) নামের এক কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে আদনানের বাবা কবির হোসেন বাদি হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এর সূত্র ধরেই র‌্যাব তদন্তে নামে। সর্বশেষ গত ৭ ফেব্রুয়ারি ওই ঘটনার সাথে জড়িত আটজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এজহারভুক্ত আসামি ডিসকো বয়েজ গ্যাংয়ের হোতা শাহরিয়ার বিন সাত্তার সেতু ওরফে ডিসকো সেতুকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যমতে মামলার এজহারভুক্ত ৫নং আসামি বিগবস্ গ্যাং গ্রুপের দলনেতা আক্তারুজ্জামান ছোটন (১৯), শাহীনুর (১৭), রমজান মোবারক (১৭), সেলিম খান (২৩), ইব্রাহিম হোসেন ওরফে সানি (২৮), মিজানুর রহমান সুমন (২২) ও জাহিদুল ইসলাম জুইসকে (২১) গ্রেফতার করা হয়।


বুধবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানিয়েছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র‌্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।


তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত সবাই আদনান হত্যার সাথে জড়িত ছিল। তাদের কাছ থেকে তিনটি চাকু, দুইটি চাপাতি, দুইটি রড, তিনটি চেইন, তিনটি স্প্রে কালার বোতল, দুইটি স্কুল ব্যাগ ও চার পুরিয়া গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।


তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ডিসকো বয়েস গ্রুপের গ্যাং লিডার সেতু রাজধানীর ড্যাফোডিল ইউনিভারসিটির বিবিএর শিক্ষার্থী। সে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তারা পিতা এয়ারপোর্টের একজন সি এন্ড এফ এজেন্ট। ওই গ্রুপের অপরজন জুইস উত্তরা স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণীর ছাত্র। তার পিতা একজন মুদি দোকানী।


এছাড়া গ্রেফতারকৃত বিগবস গ্রুপের সদস্যরাও নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য বলে জানিয়েছে র‌্যাব। তাদের মধ্যে ছোটন ইউনিক এ্যাডুকেয়ারের দশম শ্রেণীর ছাত্র ও সুমন এইচএসসি পা্স করেছে। বাকিরা লেখাপড়া করেনি। এদের মধ্যে সুমন ও তার ভাই হকার , সানি ইজিবাইক চালক, সেলিম গারমেন্টসে চাকুরি করে, রমজান সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া ব্যবসার কর্মচারী ও শাহীন ট্রান্সপোর্টে চাকরি করে।



উত্তরায় স্কুলছাত্র আদনান কবীর খুনের ঘটনায় কিশোরদের দুই ‘গ্যাংয়ের’ দলনেতাসহ ৮ জনকে আটক করের‌্যাব​


মুফতি মাহমুদ খান আরো জানান, ২০০৯ সালে সেতুর নেতৃত্বে ডিসকো বয়েস গ্রুপের আত্মপ্রকাশ হয়। ওই গ্রুপ মূলত উত্তরা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে ২০১৬ সালের শুরুর দিকে ছোটনের নেতৃত্বে ডিসকো গ্রুপের সহযোগী হিসেবে বিগবস গ্রুপের আত্মপ্রকাশ। ওই গ্রুপের সদস্যরা রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর, বেড়িবাঁধ, কোটবাড়ি, ফয়দাবাদ ইত্যাদি এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। ২০১৩ সালে ডিসকো বয়েজ গ্রুপের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তালাচাবি রাজুর নেতৃত্বে নাইন স্টার গ্রুপের আত্মপ্রকাশ ঘটে। বিভিন্ন কারণে ওই গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এর জের ধরে গত ৩ জানুয়ারি ডিসকো বয়েজ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা নাইন স্টার গ্রুপের গ্যাং লিডার রাজুকে মারধর করে। এরপর নাইন স্টার গ্রুপের সদস্যরা ৫ জানুয়ারি আজিমপুর ফুড ওভার ব্রিজের পাশে বিগবস গ্রুপের গ্যাং লিডার ছোটনকে পাল্টা আক্রমন করে। একই ধারাবাহিকতায় ৬ জানুয়ারি ডিসকো বয়েজ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা নাইন স্টার গ্রুপের রাজু ও আদনানকে মারধর করে। এ সময় রাজু পালিয়ে গেলেও আদনান পালাতে পারেনি। পরে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।


তিনি আরো জানান, গ্রেফতারদের মধ্যে জাহিদুল ইসলাম লুইস প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে সে কালো কাপড় দিয়ে মুখ বেঁধে নিজেই কুপিয়েছে আদনানকে। বাকিরা তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে।


বিবার্তা/খলিল/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com