শিরোনাম
শঙ্কায় ইভ্যালি গ্রাহকরা
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:১১
শঙ্কায় ইভ্যালি গ্রাহকরা
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। শামীমা ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টম্বর) বিকেলে মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডে নিলয় কমপ্রিহেনসিভ হোল্ডিংয়ের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের র‌্যাব সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে তাদের গ্রেফতারের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন গ্রাহকরা।


শুধু তাই নয়, ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও সিইওর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসায় অভিযানের খবর পেয়ে শত শত গ্রাহক ঘটনাস্থলে হাজির হন। এ সময় তারা তাদের গ্রেফতারের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করেন। এরপর তারা স্লোগান দিতে থাকেন ‘রাসেল ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’। রাসেলকে নিয়ে যেতে র‌্যাবকে বাধা দেন তারা। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।


উপস্থিত এক গ্রাহক কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমি তিন লাখ টাকার চেক পেয়েছি। এখন রাসেলকে গ্রেফতার করা হলো। এখন আমার টাকার কী হবে। আমরা তো এতদিন আশায় ছিলাম যে টাকা ফেরত পাব। কিন্তু তিনি যদি কারাগারে থাকেন, তাহলে তো আর টাকা ফেরত নাও পাওয়া যেতে পারে। এখন কী করব, কোথায় যাব?


এদিকে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেলের বাসায় অভিযান ও তাকে গ্রেফতারের পর ইভ্যালির ধানমন্ডির কার্যালয়ে যান র‌্যাব সদস্যরা। এ সময় ইভ্যালি কার্যালয়ে তারা ১০ মিনিট মতো অবস্থান করেন। তবে এখান থেকে কাউকে আটক করা হয়নি।


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে র‌্যাবের একটি টিম ইভ্যালির কার্যালয়ে ঢোকে। সেখানে তারা মিনিট দশেক মতো অবস্থান করার পর বের হয়ে আসে। এরপর তারা ইভ্যালি কার্যালয় ত্যাগ করে। এ সময় র‌্যাবের এই টিমে ৬৫-৭০ জন সদস্য ছিল বলেও জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।


ইভ্যালির পক্ষ থেকে এবিষয়ে কারো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বিল্ডিংয়ের সিকিউরিটি গার্ডরা জানিয়েছেন, ইভ্যালির কার্যালয়ে এখন কেউ নেই। সবাই চলে গেছে, অফিস আজকের মতো বন্ধ হয়ে গেছে।


অপরদিকে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেলের বাসায় অভিযান ও তাকে গ্রেফতারের খবর শুনে ইভ্যালির অনেক গ্রাহকই ভিড় জমান ইভ্যালির কার্যালয়ের সামনেও। এ সময় তানভীর আহমেদ নামে একজন গ্রাহক বলেন, আমার ৮০ হাজার টাকার গ্রোসারিজ আইটেম এবং একটা বাইকের অর্ডার ছিল। একটু আগে দেখলাম ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল গ্রেফতার হয়েছেন। তাই এখানে দেখতে এলাম, জানি না এখন কী হবে!


হাসান নামে আরও একজন বলেন, আমি ধার করে টাকা নিয়ে একটা বাইকের অর্ডার করেছিলাম। কিন্তু তারপর এখনো বাইক পাইনি। এখন পর্যন্ত ঝুলে রয়েছে। এখন আমার বেতনের টাকা দিয়ে ধার পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা সকলেই খুব চিন্তিত। আজকে আবার রাসেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জানি না এরপর কী হবে। আমরা আমাদের পণ্য অথবা টাকাগুলো ফেরত পাব কিনা।


এদিকে গ্রাহকদের বিক্ষোভের মাঝে বিকেল ৫টা ১৭ মিনিটে র‌্যাব-২ সদস্যরা একটি সাদা মাইক্রোতে রাসেল দম্পতিকে ওঠান। তবে এ সময় তাদের হাতে কোনো হাতকড়া পরানো হয়নি। রাসেলের পরনে কালো রঙের টি শার্ট। পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বিক্ষোভের মাঝখান দিয়ে র‌্যাব সদস্যরা তাদের নিয়ে যান। বিক্ষোভকারীরা এসময় গাড়িটি আটকে ধরেন। গ্রাহকদের দাবি, টাকা যেন ফেরত পান তারা। প্রয়োজনে রাসেলকে আরও সময় দেয়া হোক। নইলে আইনি জটিলতায় টাকা ফেরত নাও পেতে পারেন তারা।


অভিযানে অংশ নেওয়া র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, গুলশান থানায় করা মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের র‌্যাব সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।


উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতে রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা করা হয়। এ মামলাতেই রাসেল দম্পতিকে গ্রেফতার দেখায় র‌্যাব।


গুলশান থানার এসআই অনিন্দ তালুকদার বলেন, আরিফ বাকের নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক মামলাটি দায়ের করেন। মামলার নম্বর- ১৯।


এজাহারের বরাত দিয়ে গুলশান থানার পুলিশ জানায়, গ্রাহক আরিফ বাকের ও তার বন্ধুরা ইভ্যালির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে কিছু পণ্যের অর্ডার দেন। গত ২৯ মে থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত আরেফ বাকের বিভিন্ন সময় পণ্যের মূল্য বাবদ ৩ লাখ ১০ হাজার ৫৯৭ টাকা অনলাইন ব্যাংকিং ও একটি ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করেন। পণ্য ৭ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে দিতে ব্যর্থ হলে সম্পূর্ণ টাকা ফেরতের অঙ্গীকার করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। সবশেষ ৫ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির গ্রাহকসেবা শাখায় (কাস্টম কেয়ার সেন্টার) যোগাযোগ করে পণ্য পেতে ব্যর্থ হন। এর আগে যতবার যোগাযোগ করা হয়, ততবারই তারা দেব-দিচ্ছি বলে টালবাহানা করে।


মামলার অভিযোগে বলা হয়, ৯ সেপ্টেম্বর বাকেরসহ তিনজন ধানমন্ডির ১৪ নম্বর রোডে ইভ্যালির অফিসে যান ও প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেলের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তারা বাধার শিকার হন। পরে বাকের বন্ধুদের নিয়ে ইভ্যালির অফিসে প্রতিনিধিদের সঙ্গে পণ্যের বিষয়ে কথা বলতে গেলে তারা চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। একপর্যায়ে অফিসের ভেতর থেকে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল তাকে ভয়ভীতি দেখান ও তাদের টাকা দিতে অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে তিনি তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেন। তখন ইভ্যালির চেয়ারম্যান সেখানে উপস্থিত হয়ে পণ্য অথবা টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন। তিনিও তাদের ভয়ভীতি, হুমকি দেওয়াসহ চরম দুর্ব্যবহার করেন।


মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, ইভ্যালি পণ্য বিক্রির নামে নানা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তার মতো অসংখ্য গ্রাহকের ৭০০-৮০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।


এদিকে, মামলাটি তদন্ত করে আগামী ২১ অক্টোবর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল মামলার এজাহার আদালতে পৌঁছালে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী এজাহার গ্রহণ করে এই আদেশ দেন।


বিবার্তা/খলিল/আরকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com