রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় মা ও দুই শিশু হত্যার পলাতক আসামি প্রকৌশলী রকিব উদ্দিন আহমেদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হন্য হয়ে খুঁজেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আর তাকে না পাওয়া গেলে ওই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করাও সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বিবার্তাকে জানান, ঘটনার পর থেকেই তাকে খোঁজা হচ্ছে। এছাড়াও মামলা দায়েরর পর পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম ঢাকা ও ঢাকার বাহিরে অভিযান চালিয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করেও তার অবস্থান সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের একাধিক টিমও তার সন্ধানে মাঠে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি রকিব উদ্দিনের স্বজনরাও তার সন্ধানে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করছেন। তারাও কোথাও তার সন্ধান পায়নি।
জানা গেছে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ দক্ষিণখান এলাকায় ছিলেন তিনি। ওই দিন বিটিসিএলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রকিব উদ্দিন আহমেদ সর্বশেষ তার এক সহকর্মী ও বাসার মালিকের সাথে কথাও বলেছিলেন। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে দক্ষিণখান থানার প্রেমবাগান রোডস্থ কেসি স্কুলের পেছনের ৮৩৮ নম্বর বাসা থেকে তার স্ত্রী মুন্নী বেগম (৩৭), তাদের ছেলে ফারহান ভুঁইয়া (১২) ও মেয়ে লাইবা ভূঁইয়ার (৪) লাশ উদ্ধার করা হয়।
পরে ময়না তদন্ত করে চিকিৎসকরা জানান, তিন থেকে চার দিন আগে তাদের হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মা মুন্নীকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়। এছাড়াও দুই সন্তানকে শ্বাসরোধ করা হয়। এছাড়াও লাশ তিনটির উপরিভাগ বেশি পচনশীল ছিল।
এদিকে এ ঘটনায় মুন্নীর ভাই বাদি হয়ে দক্ষিণখান থানায় একটি মামলাও দায়ের করেন। ওই মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে রকিব উদ্দিনকে।
এদিকে, র্যাব ও পুলিশের পাশাপাশি নিহত মুন্নী ও পলাতক রকিব উদ্দিনের স্বজনরাও তার সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কেন, কোথায় গেছেন? তা গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ বলতে পারেননি।
নিহত মুন্নী বেগমের ভাই মুন্না রহমান বিবার্তাকে জানান, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে রকিব উদ্দিনের সন্ধানে তারা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করছেন। বিশেষ করে রকিব উদ্দিনের স্বজনদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা সন্ধান করছেন। কিন্তু কোথাও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, রকিবের যত জায়গায় যাতায়াত ছিল সব জায়গায় আমরা খোঁজ নিচ্ছি। এছাড়াও রকিব উদ্দিনের স্বজনরাও আমাদের সাথে খোঁজাখুঁজি করছেন। কিন্তু কোথাও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমার বোনের বিয়ের পর থেকে বকির উদ্দিনের সাথে আমাদের কোনো ঝামেলা হয়নি। এমনকি আমার বোনও কখনো ঝামেলার কথা আমাদের বলে নাই। কিন্তু গত ডিসেম্বর মাসে ৬০ লাখ টাকা ঋণ আছে; এমন তথ্য আমাদের জানিয়েছে রকিব উদ্দিন। তবে তা সমাধান করার আশ্বাসও দেয়া হয়ছিল পরিবারের পক্ষ থেকে। কিন্তু তারপরও এমন ঘটনা কেন ঘটানো হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে না।
চিরকূটের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনার হাতের লেখা আমি কখনো দেখি নাই। তবে বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে। উনার (রকিব উদ্দিন) অফিসের লেখার সাথে মিলিয়ে দেখলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
চিরকূটের ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, এটা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এটা নিশ্চিত হতে এক্সপাটদের দ্বারস্ত হতে হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ঘটনাস্থল থেকে একটি ডায়রি উদ্ধার করা করে পুলিশ। ওই ডায়রিতে ৬০ লাখ টাকা ঋণের কথা উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও তার স্ত্রী-সন্তানরা যাতে কারো ওপর বোঝা না হয় এজন্য তাদের তিনি হত্যা করেছেন। এমনকি নিজেকে কোনো এক রেল লাইনের পাশে মৃত অবস্থায় পাওয়া যাবে বলে লেখা রয়েছে ওই ডায়রিতে।
পলাতক রকিব উদ্দিন আহমদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ভাতশালা এলাকায়। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে রাজধানীর দক্ষিণখান প্রেমবাগান রোডস্থ কেসি স্কুলের পেছনের ৮৩৮ নম্বর বাসায় বসবাস করছিলেন।
বিবার্তা/খলিল/উজ্জ্বল/জাহিদ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]