শিরোনাম
কেউ কেন বিরোধী দলে থাকতে চায় না
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০১৮, ১৫:৫৫
কেউ কেন বিরোধী দলে থাকতে চায় না
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রশ্নটা অন্যভাবে করা যায় - কেন সবাই ক্ষমতায় যেতে চায়? আরে, এটা কোনো প্রশ্ন হলো? ক্ষমতা মানে বোঝ না? ইচ্ছেমতো সব করা যায়! সবাই-ই তাই যেতে চায় ক্ষমতায়!


তবুও আমার মন মানে না। আমি বারবার এই প্রশ্ন করতে থাকি - নানাভাবে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে। প্রশ্নটা খুব সোজা, উত্তরটা আরো। তারপরও আমার মন থেকে একটা ‘কিন্তু' কিছুতেই যায় না।


প্রথমে আসি ‘ক্ষমতায়' যাওয়া প্রসঙ্গে। এই শব্দটির প্রতি আমার যথেষ্ট আপত্তি আছে। গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় ক্ষমতার মালিক জনগণ। তাহলে যারা 'ক্ষমতায়' যান, তারা কারা? এর উত্তরও সোজা - এরা জনগণের প্রতিনিধি। অর্থাৎ, ক্ষমতাধর জনগণ ভোট দিয়ে কাউকে বা কতগুলো লোককে সেবা দেয়ার দায়িত্বে পাঠান কতগুলো সরকারি অফিসে। তার মানে, এরা ক্ষমতায় নয়, দায়িত্ব পালনে যান। তাই এই প্রক্রিয়াকে দায়িত্ব পালনে যাওয়া বললে সুবিধা হয়।


প্রায়ই সরকারি দলকে ‘শাসকগোষ্ঠী' বলে ডাকতে শোনা যায়। এই 'শাসকগোষ্ঠী' ধারণাটিও ভুল। কারো নিশ্চয়ই মাথা খারাপ না হলে নিজেকে শাসন করতে ভোট দিয়ে কাউকে পাঠাবেন না।


এসব শব্দ বদলাবার সময় এসেছে। ঠিক 'বদলানো' বলা যাবে না, বলা ভালো যে, শুধরে ঠিক শব্দগুলো বলার সময় এসেছে। কারণ, এসব শব্দ বহুলচর্চিত হবার এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব রয়েছে সাধারণের মাঝে।


এবার দ্বিতীয় প্রসঙ্গে আসি। সাধারণভাবে বিরোধী দলে কেউ যেতে চায় না। কারণ, বিরোধী দল মানে পরাজিত একটি দল, জনগণের কাছে যার গ্রহণযোগ্যতা জয়ী দলের চাইতে কম। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। কিন্তু এই দলটি বা দলগুলোও তো কিছু না কিছু ভোট পেয়েছে। অর্থাৎ, সমাজের একটি গোষ্ঠীর কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে। তারা তাদের প্রতিনিধি। তাই বিরোধী দলে থাকলেও সমাজের একটি অংশের কণ্ঠস্বর তারা। তাদের যদি পাত্তা না দেয়া হয়, তাহলে সমাজের একটি অংশের জনগণকেই পাত্তা না দেয়া হয়। অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট অংশের মানুষ নিজেদের বঞ্চিত, অবহেলিত মনে করেন।


বাংলাদেশের বাস্তবতায় বিষয়টি আরো এক কাঠি সরেস। ঐতিহাসিকভাবেই এখানে বিরোধী দল কখনো তেমন সুবিধা করতে পারেনি। স্বাধীনতার পর সেই ন্যাপ ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি থেকে শুরু, এরপর জাসদ। পরবর্তীতে কালের পরিক্রমায় যা দাঁড়িয়েছে, তা কারো জন্যই সুখকর হয়নি, বরং ‘ক্ষমতায়' যাওয়া বা থাকার জন্য সবাই খেলেছে আগুন নিয়ে।


বিরোধী দলের মানেটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যেন তারা একটি নিপীড়িত দল, যাদের কোনো অধিকার নেই। তাদের নেতা-কর্মীরা মামলার পর মামলা খাবে, জেল খাটবে অথবা কোণঠাসা হয়ে থাকবে। রাজপথে কোনোরকম কর্মসূচি দিতে পারবে না।


এই সংস্কৃতি একদিনের নয়, দিনের পর দিন ধরে এমনটিই চলে এসেছে, যার শিকার আওয়ামী লীগ বা বিএনপি নয়, শিকার আসলে মানুষ।


সে যা-ই হোক, বিরোধী দল মানে যখন এমন, তখন কে চাইবে বিরোধী দলে থাকতে? ফলে ঘাড় দিয়ে পর্বত ঠেলার মতো হয়ে যায় বিরোধী দলের আন্দোলন। বিষয়টি শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ থাকলেও হতো। ‘ক্ষমতায়' যেতে রাজনৈতিক দলগুলো নীতি নৈতিকতার বাইরেও অনেক কিছুই করে।


আজ পর্যন্ত যত রকমের সাম্প্রদায়িক ও কট্টর ধ্যান-ধারণার উন্মেষ হয়েছে এদেশে, তার প্রধান কারণ ‘ক্ষমতায় থাকা' গোষ্ঠীর তা আঁকড়ে ধরে রাখার এবং ‘ক্ষমতাহীন' গোষ্ঠীর ক্ষমতায় যাওয়ার প্রবণতা, আর সেই প্রবণতার কারণে বিষাক্ত শক্তিকে উসকে দেয়ার মানসিকতা।


তবে এ সবের মূলে রয়েছে রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা ও প্রতিহিংসা। যে প্রতিহিংসা বা অসহিষ্ণুতা তৈরি হয়েছে বিরোধী দলে না যেতে চাওয়ার মানসিকতা থেকে। বিরোধী দলে না যেতে চাওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়েছে নিপীড়িত হবার ভয় থেকে।


কিন্তু ধরা যাক, যদি এমন হতো যে, সংসদে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দল যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে তুলনামূলক কম ভোট পাওয়া বিরোধী দলগুলো। সবার প্রতিনিধিরাই সরকারের ‘দায়িত্ব' পালন করছে। তাহলে সহিষ্ণুতা ও হার মেনে নেবার সংস্কৃতি বজায় থাকতো। কারণ পরাজয় মানেই তখন ব্রাত্য হয়ে পড়া নয়, বরং আরেকটি বড় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করাই হতো তাদের মূল লক্ষ্য। তাই থাকতো না কারো একচ্ছত্র ক্ষমতা। ক্ষমতা প্রকৃতই থাকতো জনগণের হাতে।


যুবায়ের আহমেদের ব্লগ থেকে


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com