শিরোনাম
স্বর্ণ আর গলাফাটা স্লোগান
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০১৭, ১০:২৬
স্বর্ণ আর গলাফাটা স্লোগান
জিয়াউদ্দিন সাইমুম
প্রিন্ট অ-অ+

স্বর্ণ সংস্কৃত শব্দ। এটার অর্থ সোনা (রসান দিলে স্বর্ণের বর্ণ যেমন উজ্জ্বল হয়- ইসমাইল হোসেন শিরাজী)। স্বর্ণ শব্দটি প্রাকৃত ভাষায় ছিল ‘সন্ন’ আর প্রাচীন বাংলায় ছিল ‘সুনা’ (সুনার কলসী নিল নেতর বসন- শূন্যপুরাণ)। মূলানুগ অর্থে স্বর্ণ মানে ‘যে সৌন্দর্য প্রাপ্ত হয়েছে’ বা ‘সুন্দর হয়েছে বর্ণ যার’। আধুনিক বাংলায় এটা ‘সোনা’ নামে পরিচিত। এক সময় ‘সোণা’ বানানটিও চালু ছিল।


সংস্কৃতে স্বর্ণের অনেক পর্যায় রয়েছে যেমন স্বর্ণ সুবর্ণ, কলস, কাঞ্চন, হিরণ্য, হাটক, হেম, গাঙ্গেয়, তপনীর, কলধৌত, শাতকুম্ভ, চামীকর, জাম্বুনদ, জাতরূপ, কার্তস্বর, মহারজত, অষ্টাপদ। আবার মূলানুগ অর্থে ‘স্বর্ণমৃগ’ হচ্ছে হিন্দু পুরাণের সীতাকে প্রলুব্ধ করার জন্য মায়ারূপধারী রাক্ষস মারীচ। কিন্তু আলঙ্কারিক অর্থেই শব্দটি এখন প্রচলিত। এটার আলঙ্কারিক অর্থ হচ্ছে মিথ্যা ও সর্বনাশা প্রলোভন (স্বর্ণমৃগের পেছনে ছুটে ক্যারিয়ার ধবংস করে কি লাভ?)। তবে বাংলায় ‘স্বর্ণযুগ’ বলতে সমৃদ্ধির কাল বোঝায়। ধারণাটি অবশ্য ইংলিশ থেকে নেয়া। আবার ইংরেজরা ‘গোল্ডেন এজ’ কনসেপ্ট বা ধারণাটি ধার করেছে রোমানদের কাছ থেকে। আবার রোমানরা ধারণাটি ধার করেছিল গ্রিকদের কাছ থেকে।


প্রাচীন গ্রিক কবি হেসিওড পৃথিবীর কালকে চারটি যুগে ভাগ করেছেন- স্বর্ণ যুগ, রৌপ্য যুগ, ব্রোঞ্চ যুগ ও লৌহ যুগ। সুতরাং ধরে নেয়া যেতে পারে, মানুষ সোনা, রূপা, ব্রোঞ্চ আর লোহার ব্যবহার ও আর্থিক মূল্য সম্পর্কে নিশ্চিত হবার পরই পৃথিবীর কালকে চারটি যুগে ভাগ করতে শিখেছে। অন্যদিকে ভারতীয় পুরাণেও পৃথিবীর কালকে চারটি যুগে ভাগ করা হয়েছে। এ চারটি যুগ হল সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি। যুগের এ ধারণায় গ্রিকরা প্রাচীন নাকি ভারতীয়রা প্রাচীন, তা নিয়ে এখন গবেষণা হতে পারে। গ্রিক পুরাণমতে, স্বর্ণযুগ ছিল আদি-দেবতা ক্রনাসের যুগ। সে যুগে মানুষ পরম শান্তিতে বসবাস করত। কোন ঝগড়া, হিংসা, দ্বেষ ছিল না। চাষাবাস ছাড়াই ফসল ও ফলমূল পাওয়া যেত। মূলত সমৃদ্ধির এমন উৎকর্ষকে প্রকাশের জন্য স্বর্ণযুগ বাক্যভঙ্গিটি ব্যবহার করা হয়।


কিন্তু স্লোগান হচ্ছে সমবেতভাবে উচ্চারিত ধ্বনিসমষ্টি। ইংরেজি স্লোগান শব্দটি উৎসারিত হয়েছে স্কটিশ ও আইরিশ জনজাতিগোষ্ঠীর যুদ্ধের রণধ্বনি হিসেবে। যুদ্ধের রণধ্বনি slogan শব্দটির ব্যুৎপত্তি sluagh-ghairm থেকে। প্রাচীনকালে যূথবদ্ধ মানুষও আক্রমণ ও আত্মরক্ষার জন্য একত্রিত হওয়ার জন্য সতর্ক সংকেত হিসেবে অর্থবোধক বিশেষ ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টি উচ্চারণ করতো। এ ছাড়া ধর্মীয় বা সামাজিক উৎসবে যে জিগির বা আদর্শবাণী- motto অথবা সমবেত আনন্দধ্বনি প্রকাশ করত তাও এক ধরনের স্লোগান।


ইংরেজিতে স্লোগানের আভিধানিক অর্থ a party catch word| সোজা কথায় কোনো দলের বাধাবুলি। আর বাংলা ভাষায় স্লোগান শব্দের আভিধানিক অর্থ করা হয়েছে মিছিলের ধ্বনি; দাবি আদায়ের জন্য একসঙ্গে বহু মানুষের ধ্বনি; জিগির।


স্লোগানের একটা ছন্দময়তা আছে। সাধারণত স্লোগানের একটি অংশ অথবা পুরো স্লোগানটি একজন উচ্চারণ করে পরে সমবেত জনগোষ্ঠী তা উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার করে পুনরুচ্চারণ করে। স্লোগান যেমন কণ্ঠে উচ্চারিত ধ্বনিসমষ্টি, তেমনি লিখিতভাবেও স্লোগান প্রচারিত হয়। বর্তমানে ইলেক্টনিক মিডিয়াতেও স্লোগান প্রচারিত হয়। স্লোগান হতে পারে নানা রকম। যেমন উদ্দীপনামূলক, দেশপ্রেমমূলক, ঘৃণা ও প্রতিহিংসামূলক, দাবিমূলক, প্রত্যয়মূলক, পরিচিতমূলক, শুভকামনামূলক ইত্যাদি। এ ছাড়া উল্লাস বা আনন্দ প্রকাশ অথবা ব্যঙ্গাত্মক নানা রকম স্লোগানও রয়েছে। বাণিজ্যিক স্লোগানগুলো নির্দিষ্ট কোনো পণ্যের গুণ এবং শ্রেষ্ঠত্ব জ্ঞাপক বিশেষণযুক্তভাবে বিজ্ঞাপিত করা হয়। এ ছাড়া সরকারও নানারকম জনসচেতনতামূলক স্লোগান প্রচার করে। এই গ্রহবাসী দুনিয়াকাঁপানো অনেক স্লোগান গত দুশো বছরে প্রত্যক্ষ করেছে।


লেখাটি লেখকের ব্লগ থেকে নেয়া


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com