শিরোনাম
স্ত্রী এক স্নাতক
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০১৭, ০৮:৩৫
স্ত্রী এক স্নাতক
জিয়াউদ্দিন সাইমুম
প্রিন্ট অ-অ+

স্ত্রীশব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ‘শুক্রশোণিত যাতে কাঠিন্য পায়’। শব্দটির মূলে রয়েছে সংস্কৃত ‘স্ত্যৈ’ ধাতু। এক সময় স্ত্রী শব্দটি এতটা মর্যাদা ও আবেগের ছিল না। কারণ আগে শব্দটি দিয়ে স্ত্রীজাতীয় যে কাউকে বোঝাতো। পরে শব্দটির অর্থে বিবর্তন এসেছে এবং স্ত্রী দিয়ে শুধু পত্নীই বোঝাচ্ছে (তুমি কহিবে, ইহারা স্ত্রী-পুরুষ; আমি কহিব, স্ত্রী-পুরুষ বটে, কিন্তু স্বামী-স্ত্রী নয়- আলো ও ছায়া, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়; মেয়েদের সম্বন্ধে সে ছেলেটি বেশ একটু শৌখিন ছিল, তার এক স্ত্রী আছে, আর একটি নবীন বয়সের সন্ধানে সে ফিরছে- মুসলমানীর গল্প, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; মহেন্দ্রের মনে মনে বড় আশা ছিল, চটীতে গিয়া স্ত্রী কন্যার মুখে শীতল জল দিতে পারিবেন, প্রাণরক্ষার জন্য মুখে আহার দিতে পারিবেন- আনন্দমঠ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)।


পুরনো বাংলায় স্ত্রীর সমতুল শব্দ ছিল তিরি, তিরিক, তিরী। এই তিনটি শব্দ দিয়ে নারীও বোঝাত (তিরি হইয়া পুরুষসিংহের পরাক্রম- ইউসুফ জলিখা, শাহ সগীর; হানে কুলে এখো নাহি পাটাবুকী তিরী- শ্রীকৃষ্ণকীর্তন)। বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে স্ত্রী বা পত্নী অর্থে ‘তিরিক’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে (নানা বোলে সে তিরিক রঞ্জে)।


পুরনো বাংলায় লাস্য অর্থে ‘তিরিপানারঙ্গ’ (উঠে হুরি মহি আদি তিরিপানারঙ্গ- পদ্মাবতী, আলাওল), স্ত্রীকলা বা নারীর ছলাকলা অর্থে ‘তিরীকলা’ (তিরীকলা মোর থানে না পাতে তোঁ বাহী- শ্রীকৃষ্ণকীর্তন) চালু ছিল। এছাড়া তিরীজনম (স্ত্রীজনম), তিরীবধতুল (স্ত্রীহত্যাতুল্য) ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হতো।


এদিকে বাংলা স্নাতক শব্দের ইংরেজি ব্যাচেলর্স। দুটো শব্দটিই এখন আর মূল অর্থে ব্যবহৃত হয় না। ব্যাচেলরস ডিগ্রির বাংলা হিসেবে মেনে নেয়া হয়েছে স্নাতক শব্দটিকে। প্রাচীন ভারতে যারা গুরুগৃহে বিদ্যা শিক্ষা শেষ করে সাংসারিক জীবনে ঢুকতো তাদেরকে বলা হতো স্নাতক। আর ইংরেজি ব্যাচেলর্স শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ব্যাকালরেস থেকে। ব্যাকলরেস মানে যে গোরুর যত্ন নেয়, সোজা কথায় রাখাল।


সংস্কৃতে বিশেষ্য হিসেবে স্নাতক মানে স্নানকারী (সরোবরে স্নাতক দেখি না- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়), ব্রহ্মচর্য সমাপনান্তে গৃহকর্মে প্রবিষ্ট ব্যক্তি। বাংলায় বিদ্যাশিক্ষার সমাপ্তিসূচক আনুষ্ঠানিক স্থান থেকেই স্নাতক শব্দের সূত্রপাত।


মধ্যযুগে রচিত সংস্কৃত অভিধান অমরকোষে স্নাতক শব্দের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে: ‘সমাপিতবিদ্যাব্রতব্রাহ্মণ’- ব্রহ্মচর্যের পরে গৃহাশ্রমগত ব্রাহ্মণ। অমরকোষে তিন প্রকার স্নাতকের কথা বলা হয়েছে। যেমন বিদ্যাস্নাতক, ব্রহ্মস্নাতক ও বিদ্যাব্রতস্নাতক। আর মনু গ্রন্থে স্নাতকব্রতবিধি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।


ইংরেজি ব্যাচেলরস্ ডিগ্রির ‘ব্যাচেলর’ শব্দটির উৎপত্তিও কৌতূহলোদ্দীপক। ইংরেজি ‘ব্যাচেলর’ শব্দটির উৎস ল্যাটিন Baccalaureus. এর অর্থ রাখাল। তবে আধুনিক ব্যাচেলরস্ কিন্তু রাখাল নয়।


লেখাটি লেখকের ব্লগ থেকে নেয়া


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com