শিরোনাম
সাড়ে চুয়াত্তর থেকে সাত সকাল
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০১৭, ০৯:০৮
সাড়ে চুয়াত্তর থেকে সাত সকাল
জিয়াউদ্দিন সাইমুম
প্রিন্ট অ-অ+

প্রাপক ছাড়া অন্য কেউ যাতে চিঠি না খোলে তার নিষেধাজ্ঞা জ্ঞাপক চিহ্ন বা সঙ্কেত হচ্ছে ৭৪।। (সাড়ে চুয়াত্তর)। কথিত আছে, কোনো এক যুদ্ধে নিহত সৈন্যদের পৈতার ওজন সাড়ে চুয়াত্তর মণ হয়েছিল। প্রাপক ছাড়া অন্য কেউ ‘৭৪।।’ চিহ্নিত চিঠি খুললে তাকে উক্ত মৃত সৈনিকদের হত্যার পাপের ভার বনে করতে হবে ভীতি প্রদর্শন করা হয়।


আবার চিঠির সমাপ্তি বুঝাতেও ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ শব্দবন্ধ ব্যবহৃত হয় (আমার চিঠির এইখানে আজ সাড়ে চুয়াত্তর- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত)। তাঁর একটি কবিতার নামও ‘সাড়ে চুয়াত্তর’।


অবশ্য বাংলায় সাড়ে বত্রিশ ভাজা ভিন্ন চিজ। বাংলা সাড়ে (বেশি, খুব) + বত্রিশ (বহু বা নানান অর্থে) + ভাজা= সাড়ে বত্রিশ ভাজা। সাড়ে বত্রিশ ভাজা মানে চানাচুর বা ডালমুট জাতীয় মুখরোচক পাঁচমিশেলি খাবার।


প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়বার সময় সাহিত্যিক সুকুমার রায় ‘ননসেন্স ক্লাব’ নামে একটি সংঘ গড়ে তুলেছিলেন। এর মুখপত্র ছিল ‘সাড়ে বত্রিশ ভাজা’ নামের একটি পত্রিকা। সেখানেই তাঁর আবোল-তাবোল ছড়ার চর্চা শুরু।


অন্যদিকে মূল অর্থে সাতকাণ্ড রামায়ণ মানে সপ্তকাণ্ডে বা অধ্যায়ে বিভক্ত রামায়ণ গ্রন্থ (সাতকাণ্ড রামায়ণ মুখস্থ করা বেশ কঠিন ব্যাপার)। কিন্তু আলঙ্কারিক অর্থে সাতকাণ্ড রামায়ণ মানে মস্ত ব্যাপার (কেবলমাত্র এই মান্ধাতার আমলের তত্ত্ব প্রচার করিবার জন্য সাতকাণ্ড রামায়ণ লিখিবার কোনো আবশ্যক ছিল না- কাব্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; তবুও রামের ভার্যারূপে বনবাসও সীতার পক্ষে শ্রেয়, রাবণের স্বর্ণপুরীও তাঁর পক্ষে নির্বাসন- এই দাম্পত্য মূলনীতিটুকু প্রমাণ করবার জন্যেই সাতকাণ্ড রামায়ণ- আলাপ আলোচনা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)।


আবার মূলানুগ অর্থে সাতকাহন (সাত + কাহন) মানে সাত কাহন সংখ্যক অর্থাৎ ৭×১২৮০= ৮৯৬০। কিন্তু আলঙ্কারিক অর্থে সাতকাহন মানে অন্তহীন, অসংখ্যক (এ সাতকাহন প্যাঁচাল বাদ দাও)।


আর ‘সাতসকাল’ মানে সাতটি সকালবেলা নয়; একেবারে সকালে। ‘সাত’ নিয়ে বাংলা ভাষায় বেশ কয়েকটি বাগধারা প্রচলিত আছে। যেমন সাত জন্মে (কখনও), সাতপাঁচ ভাবা (নানা চিন্তা), সাতঘাটের কানাকড়ি (অকিঞ্চিৎকর সংগ্রহ), সাতেও নেই পাঁচেও নেই (সংশ্রবশূন্য), সাত চড়ে রা করে না (অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির লোক), সাতপুরুষে না শোনা (বংশানুক্রমে অশ্রুত), সাতরাজার ধনমানিক (কষ্টার্জিত মহামূল্যবান সম্পদ), সাতঘাটের জল খাওয়া/খাওয়ানো (বহু বিপদে পড়া বা ফেলা), সাত তাড়াতাড়ি (অতি শীঘ্র), সাত দিক (সর্বত্র) প্রভৃতি। এ সব ‘সাতযুক্ত’ বাগধারায় ‘সাত’ সংখ্যাটি মূলত ‘সপ্তাহ’ বা ‘সাত দিন’ বর্ণনার মাধ্যমে সময়ের পরিধি (অতিরিক্ত বা কম) প্রকাশ করে।


সাত হচ্ছে সপ্তাহের সাত বারের প্রতীক। যা দিয়ে ‘বার’ শুরু এবং শেষ। তাই সাত দিয়ে বিস্তৃত, আদিঅন্ত, গভীর, নিবিড়, সময়, বৃদ্ধি, হ্রাস, কম, প্রভৃতি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করা হতো। শুধু তাই নয়, ‘সাত আসমান’, ‘সাত স্বর্গ’, ‘সাতনরক’ সাতসন্ধ্যা, সাতজনম, সাতযুগ ইত্যাদির আদি-অন্ত পরিধিও সপ্তাহের সাতদিনের সঙ্গে অভিন্ন অর্থ প্রকাশে বাগাধারাগুলোকে প্রভাবিত করেছে।


লেখাটি লেখকের ব্লগ থেকে নেয়া


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com