শিরোনাম
জার্মানিতেও জল জমে, বানে ভাসে গ্রাম
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০১৭, ১৫:৫৯
জার্মানিতেও জল জমে, বানে ভাসে গ্রাম
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মধ্য ইউরোপের ভৌগোলিক বিশেষত্বগুলো আমাদের উপমহাদেশ থেকে আলাদা। এদেশে বনবনানীর পরিমাণ বেশি। তা সত্ত্বেও প্রকৃতির রোষে পড়ে মানুষ, তবে সেই রোষ সামলানোয় এরা আমাদের চেয়ে দড়।


জলাবদ্ধতা বলতে যদি বর্ষায় রাস্তাঘাটে জল জমে গাড়ির বনেট ডুবে যাওয়ার মতো অবস্থা বোঝায়, তাহলে তা জার্মানিতে খুব বেশি ঘটে না। তার প্রথম ও প্রধান কারণ এ দেশে শহর তৈরি করার আগে ও পরে এরা সেই শহরের পয়ঃপ্রণালী থেকে শুরু করে পানি নিষ্কাশন ও ময়লা পানি পরিশোধনের দিকে নজর রাখে। আগে থেকে পরিকল্পনা করে। তারপর সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্ত বিভাগ তৎপর হয়, নির্মাণকাজ চলে। বর্ষা হলে রাস্তায় যে জল জমবেই - এটা মেনে নিতে এ দেশের মানুষের দ্বিধা আছে এবং ছিলও চিরকাল।


ঠিক আমাদের দেশের মতো না হলেও ভারি বর্ষা এদেশেও হয়। ছোট্ট মহাদেশ ইউরোপের উত্তর ও পশ্চিম থেকে ঋতু অনুযায়ী ঝড়বাদল এসে হানা দেয়, অকারণে প্রবল বৃষ্টি হয়। আর এদের মাপজোক করে তৈরি করা পানি নিষ্কাশন প্রণালীর মুখে ছাই দিয়ে সেই ঘণ্টাখানেক, ঘণ্টাদেড়েকের বৃষ্টিতেই দেখেছি, বাড গোডেসবার্গের কাছে রেললাইনের নিচে গাড়ি যাবার টানেল জলে ভরে গেছে। দেখে ভেবেছি, সভ্য দেশে কেন এমন হয়?


কিন্তু বৃষ্টিবাদলকে তো আর কেউ সভ্য-অসভ্য শিখিয়ে দেয়নি। বলেনি, '‘ছি বাবা! বন শহর, হাজার হোক জার্মানির সাবেক রাজধানী, এখানে অমন তুমুল বৃষ্টি করলে চলে? অত জল যাবে কোথায়?''


'‘কেন, রাইন নদে!''


রাইনও তো পানিতে ভরে আছে, সুইজারল্যান্ডে বরফ গলেছে কিনা! তায় আবার ঊনবিংশ শতকে রাইনের ধারগুলো কেটে সোজা করে দেয়া হয়েছিল, নয়ত তোমার রাইনও তো ছিল আমাদের ছোট নদী চলে এঁকে-বেঁকে, তার মতন।''


‘তারপর?'


‘রাইনে বন্যার জল এলে অতীতে তার পাশে যেসব ফাঁকা মাঠ বা জলাভূমি আছে, সেগুলো সেই জল ধরে রাখতো। পরে বাড়ি, বাগান, হাওয়া খাবার স্ট্র্যান্ড ইত্যাদি বানিয়ে রাইনের কাছ থেকে তার সেই রাইনাউয়ে বা রাইনের চর কেড়ে নেয়া হয়েছে। তাই রাইনের জল এখন সাঁ সাঁ করে বন-কোলন-ড্যুসেলডর্ফে পৌঁছে যায়; যেখানে পারে পাথরের দেয়াল টপকে বিশেষ করে শহরে পুরনো অংশগুলোকে ডুবিয়ে দেয়, বাড়িঘরে জল ঢোকে, লোকজন জেরবার হয়।'


‘কিন্তু তাই বলে রাস্তায় জল জমবে?'


‘আহা-হা, রোজ কি জমে? বললাম না, মিউনিসিপালিটির হিসেবে নেই, এমনধারা বৃষ্টি হলে তবেই জমে। যখন রাস্তার ম্যানহোলের ভেতর থেকে জল বেরোতে শুরু করে আর কি! ও হ্যাঁ, শুধু বৃষ্টিবাদলাই নয়, মাঝেমধ্যে মাটির নিচে জলের পাইপ ফেটে রাস্তা ভেসে যায়। ভেসে যায় মানে ধরো হাঁটুজল – তাতেই কিন্তু এদেশে উর্দি পরা দমকলের লোক এসে রাবারের ডিঙিতে করে বুড়োবুড়িদের শুকনো ডাঙায় নিয়ে যায়।'


‘ঠাট্টা করছ?'


‘আমার ঘাড়ে ক'টা মাথা! তবে একবার গাড়িতে ইটালি থেকে সুইজারল্যান্ড হয়ে জার্মানিতে ফেরার সময় দেখেছিলাম, দু'পাশের পাহাড় থেকে একটির পর একটি জলধারা নামছে, ঠিক যেন জলপ্রপ্রাত! সে কী জল, যেন অটোবান – মানে মোটরওয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। ওই জলই তো আস্ত জার্মানি বেয়ে ধেয়ে আসে বন শহরের দিকে। ওদিকে দেড় শতাব্দী ধরে নদীদখল চলেছে, রাইনের আর কোথাও যাবার জায়গা নেই। তাই সাঁওতাল বিদ্রোহের মতো রাইন তার ঘোলা জল নিয়ে ঢুকে পড়ে তার আগের সেই উন্মুক্ত চারণভূমিতে৷ বেচারা বন শহরের কথা ভাবো: দু'পাশে পাহাড়, মাঝখানে ভরভর্তি রাইন, তার ওপর আবার বৃষ্টি। তা বানভাসি হওয়ার চেয়ে পানিবন্দী হওয়াই ভালো, নয় কি?'


‘আর দুরমুশের কথা কী বলছিলে?'


‘জার্মানিকে দেখলে আমার চিরকাল মনে হয়, বড় ঘরের ভালো ছেলে: মা যেন গাল টিপে, মাথা আঁচড়ে, পরিপাটি করে সাজিয়ে রেখেছে। এখানকার বনভূমি পর্যন্ত সাইজ করে। মুশকিল এই যে, সেই বনভূমিতে সব কাজ হয় ভারী ভারী ট্রাক্টর দিয়ে। সেই সব ট্রাক্টরের চাপে বনের মাটি যেন দুরমুশ দিয়ে পিটে শক্ত হয়ে যায়, পানি যেতে পারে না। তাই বৃষ্টির জল পাহাড়ের ঢালের বন বনানী থেকে সর সর করে নেমে আসে নিচে শহর আর নদীর দিকে। ওদিকে শহরজুড়ে শুধু বাড়ি আর রাস্তা তৈরি হচ্ছে, সেখানেও পানি যাবার পথ নেই। জার্মানির ১২ শতাংশ জমি শহর, তার আবার অর্ধেক এইভাবে ‘সিলড', অর্থাৎ সিল করে বুজিয়ে দেয়া হয়েছে৷ ওদিকে শহুরে বসতি বাড়ছে দিনে ১৩০ হেক্টর করে।'


অরুণ শঙ্কর চৌধুরীর ব্লগ থেকে


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com