শিরোনাম
শব্দরা সহমত হয় কি সহসা?
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০১৭, ০৮:১৫
শব্দরা সহমত হয় কি সহসা?
জিয়াউদ্দিন সাইমুম
প্রিন্ট অ-অ+

সহমত মানে একমত। অবশ্য বাংলাদেশের অভিধানগুলোতে শব্দটি এখনও মান্যতা পায়নি। তবে শব্দটি ভারতের মিডিয়ায় বেশ জাকিয়ে বসেছে। বাংলাদেশের প্রথম আলোর অনলাইন ভারসন ইতিমধ্যে শব্দটিকে গ্রহণ করেছে (ভারতে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে বলিউড তারকা আমির খানের বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত প্রকাশ করেছেন অস্কারজয়ী ভারতীয় সংগীতকার এ আর রাহমান: ২৫ নভেম্বর, ২০১৫)। অবশ্য সাহিত্যে শব্দটি বেশ রমরমিয়ে চলছে (কিন্তু সুধীন্দ্রনাথের কাব্যভাষা থেকে শুরু করে জীবনদর্শনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ সহমত প্রকাশ করতে পারেননি- রবীন্দ্র-প্রেরণায় ধন্য কবিগণ, সরকার আবদুল মান্নান; আর শেষ দুই পঙক্তিতে তুলে ধরা প্রশ্নে সহমত হয়ে মনে হয় এতো আমারও প্রশ্ন- প্রসঙ্গ: রবীন্দ্রনাথ, উমাপদ কর; বাবার কথায় সহমত পোষণ করে হালকা ভাবে ওমোভো মাথা নাড়ে- যুদ্ধের আড়ালে, মূল: বেন ওকরি অনুবাদ ফজল হাসান)।


অন্যদিকে সহসা ঢাহা সংস্কৃত শব্দ। এটার অর্থ হঠাৎ, অকস্মাৎ, অতর্কিতভাবে (রণসজ্জায় সজ্জীভূত হউন, সহসা জিগীষা ফলবতা হবে- দীনবন্ধু মিত্র; সহসা এক দৈববাণী শুনিয়া বাদশার দেহ রোমাঞ্চিত হইল- শেখ ফজলুল করিম; সহসা শব্দ করে হেসে উঠে বুড়ো মকবুল; কপালে এক মুঠো ধুলো ছুঁয়ে সহসা একটা প্রতিজ্ঞা করে বসে সে এই তওবা করলাম বিয়ে শাদি আর করমু না- হাজার বছর ধরে, জহির রায়হান; সহসা কুহেলি পড়িল টুটিয়া- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত; সহসা নেতারা রুদ্ধ দেশজুড়ে, ‘দেশপ্রেমিক’ উদিত ভুঁইফোড়- মধ্যবিত্ত, সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়; বরষায় আজি কদম্ব-তনু জড়ায়েছে শ্যামলতা, সহসা পড়িল মনে মোর বঁধু হারানো দিনের কথা- শ্যামাপদ চক্রবর্তী; ঘন দেয়া দমকে দামিনী চমকে, ঝঙ্কার ঝাঁঝর ঝমঝম ঝমকে, মনে পড়ে সুদূর মোর প্রিয়তমাকে মরাল-মরালীরে হেরি সহসা- কাজী নজরুল ইসলাম; স্বপনেও কভু ভাবি নাই প্রিয়তম, এমনি করিয়া সহসা আসিয়া নয়ন জুড়াবে মম- শ্যামাপদ চক্রবর্তী; সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস শাখা দুলাইয়া গাছে, দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল, আমার কোলের কাছে- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; গভীর থির নীরে ভাসিয়া যাই ধীরে, পিক কুহরে তীরে অমিয়-মাখা। পথে আসিতে ফিরে, আঁধার তরুশিরে সহসা দেখি চাঁদ আকাশে আঁকা- বধূ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)।


কিন্তু সহসা শব্দটিকে কেউ কেউ শীঘ্র বা সত্বর অর্থে ব্যবহার করেন (এই সেতুটি সহসা মেরামতের কোনো সম্ভাবনা নেই)।


কথ্যভাষা ও মিডিয়াতে সহসা শব্দের ভুল প্রয়োগ বেশি। ভুল প্রয়োগ ক্রমাগত চলতে থাকলে সহসা শব্দটি তার মূল অর্থ হারিয়ে ফেলতে পারে।


সহসা শব্দের মূল অর্থ ছিল ‘সবলে বা বলের সাথে’। ‘হঠাৎ’ শব্দের অর্থও ছিল একই।


সুকুমার সেন তাঁর ‘ভাষার ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থে এ দুটি শব্দের অর্থ সংকোচনের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, ‘সাধারণত বল প্রয়োগের মধ্যে বুদ্ধি পরিচালনার অভাব দেখা যায়; সুতরাং অর্থের মধ্যে চিন্তাহীনতার বা অবিমৃষ্যকারিতার ভাব সহজেই আসিয়া পড়ে। অবিমৃষ্যকারিতা হইতে আরো সহজে আকস্মিকতায় পৌঁছানো যায়। তাহার পর অবিমৃষ্যকারিতা- এই মধ্যবর্তী অংশ লোপ পাইয়া শব্দ দুইটির অর্থ হইল ‘আকস্মিকভাবে’। এই অর্থের সহিত আদিম অর্থের যোগ সহজে বোঝা যায় না।’


সহসা শব্দের গঠন হচ্ছে সংস্কৃত সহস্ + আ। সংস্কৃতে বিশেষণ হিসেবে সহসা মানে হাস্যকারিনী।


লেখাটি লেখকের ব্লগ থেকে নেয়া


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com