শিরোনাম
সহজ কথা যায় না বলা সহজে
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০১৭, ০৮:৫০
সহজ কথা যায় না বলা সহজে
জিয়াউদ্দিন সাইমুম
প্রিন্ট অ-অ+

সংস্কৃতে সহজ শব্দের অর্থ সহজাত, স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলায় সহজ মানে অনায়াসসাধ্য, সোজা, সুবোধ্য (সহজ কাজ, সহজ কথা, সহজ প্রশ্ন অথবা সহজ উদরে হব না পেটুক, সেইটুকু ভাব হব না পেটুক- নিরুপায়, সুকুমার রায়; সহজ হবি, সহজ হবি, ওরে মন, সহজ হবি- গীতালি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; সহজ বিস্ময় ও সরল জিজ্ঞাসার উন্মুখ; আমরা আজ নিঃসংশয় যে কবিতার স্বাধিকার সহজ কবিত্বে স্বাধিকার সহজ কবিত্বে পরাকাষ্ঠা- সুধীন্দ্রনাথ দত্ত; সহজে অবলা জাতি তায় তুমি চেটো; সহজে হইবে বলি সোনার সোহাগা- ঘনরাম চক্রবর্ত্তী; সহজে লিখে না দিলে লিখে নেবে- মীর মশাররফ হোসেন; কংগল বাঁধিলেও পুলিশকে বলা সহজ হইত যে ইহাতে চৌধুরী সাহেবের কোন হাত নাই- কাজী নজরুল ইসলাম; এত সহজে ভবী ভুলবার নয় মিষ্টি বের কর- নীলিমা ইব্রাহিম; আমারও তেমন একটি বিধিদত্ত সহজ কবচ ছিল; উল্টো করে বলি আমি সহজ কথাটাই- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; পরিপূর্ণ করুণার ও মমতার স্নেহপানি সহজ বন্ধুত্বের মাধুর্যে তাহার দিকে এমন প্রসারিত করিয়া দিয়াছিল- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়; চিঁড়ে খেতে খেতে কিছুক্ষণের মধ্যে আবার সহজ হয়ে এল টুনি- হাজার বছর ধরে, জহির রায়হান)।


সরল অর্থেও বাংলায় সহজ শব্দের প্রয়োগ আছে (সহজ লোক)। একই নিয়মে ‘সহজে’ মানে অনায়াসে। ‘সাধারণত’ অর্থেও সহজ শব্দটি ব্যবহৃত হয় (এ জাতীয় ঘটনা সহজে ঘটে না)।


বিশেষ্য ও বিশেষণ পদে ‘সহজ’ শব্দের অর্থ এক নয়। বিশেষ্যে সহজ অর্থ সহোদর। কারণ সহজ শব্দের গঠন হচ্ছে সহ (সহিত) + জ (জাত) অর্থাৎ এক মাতৃগর্ভোৎপন্ন ভ্রাতা।


জোতিষশাস্ত্রে সহজ অর্থ জন্মলগ্ন হতে তৃতীয় স্থান। তন্ত্রাচারভেদ অর্থেও সহজ শব্দটি চালু (বানের সহিত সদাই সাজিতে সহজের এই রীতি- চণ্ডীদাস)।


মধ্যযুগে প্রেম অর্থেও সহজ শব্দটি চালু ছিল (সহজ সহজ সবাই কহয়ে সহজ জানিবে কে- চণ্ডীদাস)।


বিশেষণে সহজ মানে সহজাত বা স্বাভাবিক। এই অর্থে সাহজিক শব্দটিও প্রচলিত। সুলভ, অনায়াসসাধ্য, অনায়াসসিদ্ধ, অকঠিন, সুবোধ্য, অকৃত্রিম, সরল ও সোজা অর্থেও শব্দটির প্রয়োগ রয়েছে।


রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, সহজ কথাটি যায় না বলা সহজে। কথাটি যেমন সত্য, তেমনি সহজ শব্দটির অর্থ মোটেও সহজ নয়। আমাদের সমাজে সহজ শব্দটির রয়েছে নানাবিধ ব্যবহার। সংক্ষেপে বলা যায়, আমরা সোজা, অল্পে যা বোঝা যায়, কপটতাহীন, স্বাভাবিক ও বিনাকষ্টে (তখন ধীরে চামার-কুলপতি কহিল এসে ঈষৎ হেসে বৃদ্ধ, ‘বলিতে পারি করিলে অনুমতি, সহজে যাতে মানস হবে সিদ্ধ- জুতা আবিষ্কার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর), অনায়াসে, সামান্য কারণে ইত্যাদি বোঝাতে সহজ শব্দটির দ্বারস্থ হই। এটা অকঠিন, শান্ত, সহজাত অর্থেও ব্যবহৃত হয়।


কিন্তু সহজ শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থটাই বাঁধিয়েছে যত্তো গণ্ডগোল।


সহজ শব্দের আসল অর্থ হচ্ছে জন্মের সঙ্গে জাত, বংশগত ও স্বাভাবিক। এ তিনটি শব্দের ব্যাখ্যায় বলা যায়, সহজ মানে গর্ভজাত, সহোদর, যমজ ইত্যাদি।


ভাষাবিজ্ঞানীরা এখনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি, সহজ শব্দটি কি করে সোজা বা সরল অর্থ পেল। তবে কেউ কেউ ধারণা করেন, ভাইবোনের সহজ-সরল-স্বাভাবিক সম্পর্কই হয়তো সহজ শব্দটিকে এতো স্বাভাবিক ও সরল বানিয়ে দিয়েছে।


সংস্কৃতে সহজ শব্দের অর্থ হচ্ছে সহোদর, একই মায়ের গর্ভজাত ভাই। হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, জন্মলগ্ন হতে তৃতীয় স্থানকে সহজ স্থান বলে।


সহজ শব্দের গঠন হচ্ছে সংস্কৃত সহ + জন্ + অ।


শাস্ত্রীয় নৃত্যে ভ্রুর স্বাভাবিক অবস্থাকে সহজ বলা হয়।


ভারতীয় শাস্ত্র মতে, যেসব প্রবৃত্তি মানুষ জন্মেও সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে থাকে অথবা জন্মসূত্রে পরে পেয়ে থাকে, তাই সহজ। যেমন ক্ষুধাতৃষ্ণা, সুখদুঃখ, কাম লোভ ক্রোধ মোহ ইত্যাদি (সূত্র: নীল পাটোয়ার, সুকমার সেন)।


লেখাটি লেখকের ব্লগ থেকে নেয়া


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com