শিরোনাম
সরাসরি থেকে সসেমিরা
প্রকাশ : ২০ জুন ২০১৭, ১৪:২৩
সরাসরি থেকে সসেমিরা
জিয়াউদ্দিন সাইমুম
প্রিন্ট অ-অ+

ফারসি ‘সর-এ-সর’ থেকেও বাংলায় সরাসরি শব্দটি এসেছে। ফারসিতে সর-এ-সর মানে শুরু থেকে শেষ; এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত; সব; পুরোপুরি; সম্পূর্ণ। তবে ফারসিতেও ‘সরাসরি’ শব্দটি রয়েছে। ফারসি সরাসরি মানে ‘একটি মাধ্যম; গড়পড়তা; সংক্ষিপ্ত। কিন্তু বাংলায় ফারসি শব্দ ‘সরাসরি’ ঢোকার পর তার প্রকৃত অর্থ টিকে থাকেনি। বাংলায় বিশেষণ হিসেবে সরাসরি অর্থ তৃতীয়পক্ষের সহায়তা ছাড়া; সংক্ষেপ। আর বিশেষ্যের বিশেষণ হিসেবে সরাসরি অর্থ সোজা, বরাবর, সংক্ষিপ্তভাবে।


এদিকে মূলানুগ অর্থে সলিল মানে ‘যে শিগগির গমন করে।’ সলিলের আভিধানিক অর্থ পানি, উদক, বারি (অমলে সলিলে প্রাণ নহে সমাধান। আর মরণের সখি আছে কি ব্যবধান?- বাংলা গান; প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে কে কোথা ধরা পড়ে কে জানে। সকল গরব সব হায় কখন টুটে যায়, সলিল বহে যায় নয়নে- মায়ার খেলা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; এ যেন রে অভিশপ্ত প্রেতের পিপাসা, সলিল রয়েছে প’ড়ে, শুধু দেহ নাই। এ কেবল হৃদয়ের দুর্বল দুরাশা সাধের বস্তুর মাঝে করে চাই, চাই- অক্ষমতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)।


সলিলের বিশেষণ সলিলী। এটার অর্থ জলীয় (মালিত তরঙ্গগণ সলিলী সংগ্রামে- নবীনচন্দ্র সেন)। তবে উচ্চারণের সমতা থাকলেও ‘সলিল’ আর ‘সলীল’ এক নয়। সলীল বিশেষণ। এটার অর্থ লীলাযুক্ত, মনোহর ভঙ্গিযুক্ত, কৌতূহলী। সলিল শব্দের গঠন সংস্কৃত সল্+ ইল। আর সলীল শব্দের গঠন হচ্ছে সংস্কৃত স (সহ)+ লীল।


ইংরেজি saucer থেকে প্রতিবর্ণায়ন হিসেবে বাংলায় সসার শব্দটি এসেছে। সসার মানে তসতরি বা ধালা, ছোট রেকাবি (একখানা সসারে কিছু বরফ আর গোটা কয়েক আঙ্গর নিয়ে বসল- সৈয়দ মুজতবা আলী)।


কিন্তু সসারের এই অর্থ এখন আমরা ভুলে যাচ্ছি। কারণ অজ্ঞাত বিশ্ব থেকে আগত রহস্যময় জ্যোতির্বস্তু বা ইউএফও (unidentifying flying objects) বোঝাতে আমরা সসার শব্দটি প্রয়োগ করি (সসার সেটা কেমন জিনিস বয়স কতো, উনিশ না বিশ, গুনগুনিয়ে বললো, ‘আমি খালাতো ভাই, মশার’- ছড়া, টোকন ঠাকুর)।


কিন্তু সায়েন্স ফিকশনগুলি যে সব ধারণা দিচ্ছে, তাতে দেখা যায়, সব ইউএফও থালা অর্থাৎ সসারের মতো নয়। কিন্তু ইউএফও শব্দটি উচ্চারিত হলে আমাদের মনে সসার শব্দটির কথা ভেসে উঠে। বলা যায়, সময়ের ব্যবধানে সসার আর ইউএফও সমার্থক শব্দে পরিণত হতে পারে।


একাধিক শব্দ বা বাক্যের প্রথম অক্ষর দিয়ে নতুন শব্দ তৈরি করা হলে তাকে মুণ্ডমাল শব্দ (acrostic word) বলে। চারটি সংস্কৃতের শ্লোকের আদিশব্দ ‘সম্ভাব, সেতুবন্ধ, মিত্রদ্রোহী, রাজা’ নিয়ে শব্দটি গঠিত হয়েছে।


মূল শ্লোকটি হচ্ছে: সদ্ভাবপ্রতিপন্নানাং বঞ্চনে কা বিদগ্ধতা। অঙ্কমারুহা সুপ্তানাং হন্ত কিংনাম পৌরুষম, সতুবন্ধে সমুদ্রে চ গঙ্গাসাগরসঙ্গমে। ব্রহ্মহা মুচাতে পাপৈমিত্রদ্রোহী ন মুচাতে, মিত্রদ্রোহী কৃতঘ্নশ্চ যে চ বিশ্বাসঘাতকাঃ। তে সর্বে নরকং যান্তি যাবচ্চন্দ্রদিবাকরী, রাজাসি রাজপুত্রহসি যদি কল্যাণমিচ্ছসী। দেহি দানং দ্বিজাতিজো দেবতারাধনং কুরু।’


সসেমিরা শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বাহ্যজ্ঞানশূন্য, হতভম্ব, বিমূঢ় (সফো বিরক্ত হ’য়ে দেওয়ালের দিকে মুখ ক’রে বলল ‘আমার এখন সসেমিরা-সসেমিরা খেলতে ভাল লাগছে না- সফোর বাঘ, রোহণ কুদ্দুস)।


লেখাটি লেখকের ব্লগ থেকে নেয়া


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com