শিরোনাম
‘সিমেড হেলথ’ উদ্যোগ নিয়ে ডঃ মামুনের স্বপ্ন আকাশছোঁয়া
প্রকাশ : ০৯ মে ২০১৮, ১৮:০০
‘সিমেড হেলথ’ উদ্যোগ নিয়ে ডঃ মামুনের স্বপ্ন আকাশছোঁয়া
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডঃ খন্দকার আবদুল্লাহ আল মামুন যুক্তরাজ্যের সাউথহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় ও কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপর পিএইচডি ও পোস্ট-ডক্টরেট সম্পন্ন করেছেন। তিনি একজন গবেষকও। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে নিজ কর্মক্ষেত্রে অ্যাডভান্সড ইন্টিলিজেন্ট মাল্টিডিসিপ্লিনারি সিস্টেম ল্যাবের প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখানে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করছেন। স্বাস্থ্যসেবা, পঙ্গুত্ব ও শিক্ষা ক্ষেত্রের উপর নানান ধরনের গবেষণাও করছেন।


গবেষণা করার সময় তাঁর মাথায় চিন্তা আসে উদ্যোক্তা হিসেবে দেশের সাধারণ মানুষের অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কিছু করার। কেননা গবেষণার সময় তিনি বুঝতে পারেন দেশের প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থায় যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো নিয়ে কিছু করতে হবে। গবেষণা করে ওই সমস্যা চিহ্নিত করে তিনি একটা সহজ সমাধান বের করেন। সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা, চেষ্টা আর নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনিই বাংলাদেশে প্রথম অত্যাধুনিক ডিভাইসের মাধ্যমে স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে জানতে সাশ্রয়ী উপায়ে ও সহজে বহনযোগ্য ক্লাউডভিত্তিক চিকিৎসাসেবা উদ্ভাবন করেছেন। তাঁর স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের নাম ‘সিমেড হেলথ’। এই সিস্টেমটি অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।


সম্প্রতি রাজধানীর ধানমন্ডিতে ‘সিমেড হেলথ’ সেবার প্রধান কার্যালয়ে বিবার্তার মুখোমুখি হন ডঃ খন্দকার আবদুল্লাহ আল মামুন। জানান আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর স্বাস্থ্যসেবামূলক উদ্যোগের উদ্দেশ্য, কার্যক্রম ও এর সুযোগসুবিধাসহ প্রতিষ্ঠানটির কর্মপরিকল্পনা।


ডঃ মামুনের মতে, দেশে প্রতিবছর শতকরা ৬৭ ভাগ মানুষ মারা যায় অসংক্রামক ব্যাধিতে। এটা প্রতিরোধে এখনো আমাদের দেশে তেমন কোনো উদ্যোগ ফলপ্রসূভাবে শুরু হয়নি। কিন্তু আশার কথা হলো, শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার আগেই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষার মাধ্যমে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। শহর-নগর-বন্দরসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যেই আমাদের এ চিকিৎসাসেবা চালু করা। স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ, হেলথ স্ক্রিনিং করা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে কীভাবে সুস্থ থাকা যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি ‘সিমেড হেলথ-এর মাধ্যমে।


সেবাটির সুবিধার বিষয়ে ডঃ মামুন জানান, আধুনিক জীবনে সবাই অফিস-আদালত, কাজ-কর্ম নিয়ে বিজি থাকেন। শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে সময়ের অভাবে ডাক্তার পর্যন্ত দেখানো হয়ে উঠে না। যদিও ডাক্তার দেখানোর সময় হয় ডাক্তার হাতে ধরিয়ে দেন নানান ধরনের টেস্ট। সিরিয়াল দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ওই সব টেস্ট করতে হয়। এরপর অপেক্ষা ওই টেস্টের রিপোর্টের। প্রতিনিয়তই এসব বিড়ম্বনা ও ভোগান্তির শিকার হতে হয় রোগিকে।


আমাদের এখানে প্রতিনিয়ত স্মার্ট টুলস ও মোবাইল অ্যাপসের সমন্বয়ে ব্লাড পেসার, পালস, ব্লাড অক্সিজেন স্যাচুরেশন, শরীরের তাপমাত্রা, ওজন ও উচ্চতা অনুযায়ী ওবিসিটি পরীক্ষাসহ নানা ধরণের স্বাস্থ্য পরীক্ষা দেয়া হচ্ছে। আমাদের এই সেবাটির মাধ্যমে একজন রোগী হাসপাতালে না গিয়ে ১০ মিনিটেই অত্যাধুনিক স্মার্ট হেলথ ডিভাইস ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় করতে সক্ষম হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পরীক্ষার সাথে সাথেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রিপোর্ট পেয়ে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হওয়ায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মত রিপোর্ট প্রিন্ট করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে, প্রতিটি ইউজারের অ্যাকাউন্টে হেলথ ডাটা রেকর্ডের সুযোগ থাকায় পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে তা দেখার সুযোগ রয়েছে।


কেউ স্বল্পমূল্যের এই স্মার্ট হেলথ টুলস কিনে এক একটিতে ১০ হাজার বার পর্যন্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো সম্ভব। শুধু হাসপাতালে যেতেই যে খরচ হয় সেই খরচে পরীক্ষাগুলো করা সম্ভব। হাসপাতালের বিড়ম্বনা এড়িয়ে মাত্র ১০০ টাকা খরচে করেই এ সেবা নেয়া যাচ্ছে সিমেডের মাধ্যমে।


বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক উদ্ভাবন ও উন্নয়ন খাতে ডঃ মামুনের নানাবিধ অবদান স্বীকৃত। তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য অসংখ্য ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার আর্কিটেকচার আবিষ্কার করেছেন। স্মার্ট হেলথ ডিভাইস ব্যবহার করে ঘরে বসে সহজেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যাচ্ছে বলে অনেকক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। এই উদ্ভাবনটি তিনটি জাতীয় আইসিটি পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করে।


পুরস্কার সম্পর্কে জানতে চাইলে ডঃ মামুন বলেন, ২০১৭ সালের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের ‘১০০০ ইনোভেটিভ-২০২১ প্রকল্প’ থেকে হাজার হাজার প্রস্তাবিত প্রকল্পের মধ্য থেকে নির্বাচিত ৯টি প্রস্তাবিত প্রকল্পের মধ্যে আমাদের প্রকল্পটি অন্যতম হিসেবে পুরস্কৃত হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য আমরা ১০ লাখ টাকা অনুদান পাই। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আমাদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন।


দ্বিতীয় ব্যাচ জিপি এক্সিলেটর প্রোগ্রামে ২০১৬-এ অংশ নেয়া ৫০০ কম্পানির থেকে মনোনীত শীর্ষ পাঁচ স্টার্টআপ কম্পানির মধ্যে আমাদের সিমেড হেলথ অন্যতম স্টার্টআপ কম্পানি হিসেবে মনোনীত হয়। সেখানেও আমাদের প্রকল্পটি পুরস্কৃত হয়।


এপ্রিল মাসে সিমেড হেলথ উদ্যোগটি সীডস্টার ইনোভেশন পুরস্কার-২০১৮ পায়। এ পুরস্কার পেয়ে ডঃ মামুন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাতকালে সিমেডের পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি জানালে মন্ত্রী তাঁকে এ অভাবনীয় সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানান এবং প্রতিষ্ঠানটিকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সীডস্টার ইনোভেশন পুরস্কার-২০১৮ এর অনুদান হিসেবে সিমেড হেলথকে ৫০ হাজার ডলার দেয়া হয়। সিমেড শীর্ষ ১২ টি স্টার্টআপস এর মধ্য থেকে শীর্ষ ইনোভেশন পুরস্কার পায়।



আলাপ প্রসঙ্গে জানা গেল, ডঃ মামুন আইইইই ইঞ্জিনিয়ারিং ইন মেডিসিন অ্যান্ড বায়োলজি সোসাইটি, বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মূল পরিচালক এবং বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাওয়ার্নেস ইনিসিয়েটিভ অব নিউরোসাইন্সের মূল উদ্যোক্তা।


অ্যাডভান্সড ইন্টিলিজেন্ট মাল্টিডিসিপ্লিনারি সিস্টেম ল্যাব তৈরির লক্ষ্য ও শুরুর গল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসে একটা বিশ্বমানের রিসার্চ ল্যাব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হই, যাতে আন্তর্জাতিকমানের গবেষকরা গবেষণার সুযোগ পান। এতে আমাদের সমাজের লোক উপকৃত হবে। সেই উদ্দেশ্য থেকেই ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে যোগদান করি। ২০১৪-এর ডিসেম্বরে আমরা ভিসি ড. রেজওয়ান খান ও প্রোভিসি চৌধুরী মফিজুর রহমানের উৎসাহেই ল্যাবটা শুরু করি। ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টো এবং ইউনিভার্সিটি অব সাউথহ্যাম্পো থাকা অবস্থায় আমার কিছু পূর্বের গবেষণা উপাদান ছিল, সেগুলো দিয়েই ল্যাবটা শুরু করি। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রী ছাড়াও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ও মাস্টার্সের ছাত্রছাত্রীরা স্বাধীনভাবে এই ল্যাবে রিসার্চ করার সুযোগ পাচ্ছেন।


সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জাতীয় আইসিটি পুরস্কার পাওয়া সিমেডের এই উদ্যোগ নিয়ে ডঃ মামুনের স্বপ্ন আকাশছোঁয়া। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে সেবাটি শহরকেন্দ্রিক দেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের এলাকাভিত্তিক সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে ১০০ টাকায় ১০টি স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ তৈরি করে দেয়ার পরিকল্পনা সিমেডের। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরের সকলেই যেন এই সেবা পেতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের রিসার্চ হাব সেন্টারে বাংলাদেশে বসেই আন্তর্জাতিক মানে নতুন উদ্ভাবন ও মেডিকেল সেবা দিতে চাই।


বিবার্তা/উজ্জ্বল/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com