পড়াশুনা করার সময়ই চিন্তা করেছিলাম আমি ব্যবসা করব এবং তা করবো টেকনোলজি লাইনেই। এ টার্গেটকে সামনে রেখে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা করে অ্যালুমনি অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করি। উচ্চ ডিগ্রি নিতে পাড়ি জমাই কলম্বিয়াতে। ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে সফটওয়্যার সিস্টেম এবং পরে ইউনিভার্সিটি অব হংকং থেকে অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম নিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি নেই। আমি একেবারেই টেকনিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডের।
কথাগুলো বলছিলেন স্টার কম্পিউটার সিস্টেম লিমিটেডের ডিরেক্টর ও চীফ অপারেটিং অফিসার রেজওয়ানা খান।
টেকনিক্যাল লাইন থেকে পড়াশুনা করা রেজওয়ানা তথ্যপ্রযুক্তি বিজনেসে কনসালটিং হিসেবে কাজ করছেন দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে। এবারের বেসিস নির্বাহী কমিটির নির্বাচনে লড়ছেন এই নারী উদ্যোক্তা।
সম্প্রতি বিবার্তার কার্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ক্যারিয়ার শুরু, কার্যক্রম এবং নির্বাচন ভাবনা নিয়ে বিবার্তার মুখোমুখি হন রেজওয়ানা।
ক্যারিয়ার জীবনের শুরু থকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা নিয়েই ছিল যার ধ্যান-জ্ঞান, তিনি সফটওয়্যার টেকনোলজিতে উচ্চশিক্ষা নিয়ে শুরু করেন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কনসালটিং ব্যবসা।
স্টার কম্পিউটার সিস্টেম লিমিটেডের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে রেজওয়ানা বলেন, আমাদের কোম্পানীর মূল কাজ হলো- এন্টারপ্রাইজ অ্যাপ্লিকেশন ইমপ্লিমেন্টটেশন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কনসালটিং। আমরা যেসব লেভেলের কোম্পানীর কনসালটিং করি এসব প্রজেক্টের সাইজ এবং মূল্যমান ৫ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন ল্যাভের কোম্পানীর কনসালটিং কাজ করি। পাশাপশি একটা এইচআর রিসোর্চ ডেভেলপমেন্ট সেক্টর আছে। বাংলাদেশে এটা ট্রেনিং সেক্টর হিসেবে পরিচিত। এ সেক্টর থেকে ইতোমধ্যেই ১৪ হাজারেরও বেশি ছেলে-মেয়ে আইটির বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আমরা সাধারণত আমেরিকার বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর কাজগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি।
কনসালটিংয়ের জন্য একটা বড় টিম রয়েছে। কনসালটিংয়ে আমরা একদম এন্টারপ্রাইজ লেভের সল্যুশন দিয়ে থাকি। কোম্পনীর বিজনেস প্রসেস বুঝে, বিজনেস প্রসেস রিএন্টারিং করে কীভাবে হোল সল্যুশন হবে এসব দিকগুলো গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আর আমাদের কাজের একটা বিশেষ দিক হলো-যে কাজই করবো যেন সেটা হয় কোয়ালিটিসম্পন্ন। আন্তর্জাতিক কোম্পানীগুলো কাজের কোয়ালিটিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
স্টার কম্পিউটার সিস্টেম শুধু নয়, এর পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে আরো কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে। স্টার কম্পিউটারের মতো আরো দুইটা ভেঞ্চারের কাজ আমি ইতোমধ্যেই শুরু করেছি। এর মধ্যে একটা হলো- নলেজ বেইড কোস্পানী। এখানে শুধু নলেজ লেভেলের কাজ করা হবে। অন্যটা হলো-হাই ট্যাকনিক্যাল অ্যাডভান্স লেভেল কোম্পানী। এটা শুধু টেকনোলজিভিত্তিক। এখানে বিশ্বের উন্নত ও সুপার টেকনোলজিগুলো নিয়ে কাজ করা হবে। দেশে ও বাইরে এগুলোর রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু হয়েছে।
১৪ বছর ধরে সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন ইমপ্লিমেন্টটেশন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কনসালটিং নিয়ে কাজ করা ব্যস্ত এ উদ্যোক্তার বর্তমান ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান এবারের বেসিস নির্বাচনে বাংলাদেশ উইমেন ইন আইটির (বিডব্লিউআইটি) সভাপতি ও সফটওয়্যার কোম্পানি দোহাটেক নিউ মিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহার প্যানেলে অংগ্রহণ করছেন।
তিনি বলেন, বেসিস নির্বাচনে জয়ী হলে আমি আসব মাত্র দুই বছরের জন্য। এটা খুবই অল্প সময়। এ সময়ে আমি দুইটা বা তিনটা টার্গেট নিয়ে আসতে চাই। আর ওই টার্গেটকেই গুরুত্ব দেবো। কারণ অনেকগুলো কাজ একসঙ্গে করতে গেলে কোন কিছুই হয় না।
ওই টার্গেট সম্পর্কে উদ্যোক্তা বলেন, আমি বেসিস সদস্যদের জন্য একটা হেল্পডেস্ক তৈরি করে চাই, যাতে কোনো সদস্য যখন কোনো সমস্যায় পড়বেন তখন যেন এটির মাধ্যমে দ্রুত এবং সঠিক সমাধান নিতে পারেন। আর দ্বিতীয় টার্গেটটা হলো- আমার চিন্তায় বেসিস তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন। এখানে আমরা কেন যাই, যাতে সদস্য হিসেবে আমাদের যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলোর যেন সমাধান হয়। কাজ করতে গিয়ে আমি দেখেছি, নতুন উদ্যোক্তাকে ব্যবসা করতে গিয়ে নানান ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হয়। সদস্যরা যাতে এ সব সমস্যার সঠিক গাইডলাইন পেতে পারেন, সেটা নিয়েও কাজ করার আমার পরিকল্পনা রয়েছে।
রেজওয়ানা আরও বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েদের উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার জন্য তাদেরকে উন্নত প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে তারা দেশের পাশাপাশি বর্হিবিশ্বের সাথে তাল মিলে কাজ করতে পারে এবং সঠিক মূল্যায়ন পায়। আমি এই বিষয়টি নিয়েও কাজ করতে চাই। আর এটা বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) থেকে করা সম্ভব।
কিছুটা হতাশ হয়ে এ উদ্যোক্তা বলেন, আমি বাইরের অনেক কাজ করি। তবে কষ্ট লাগে যখন দেখি একই প্রজেক্টে আমাদের দেশের মানুষ যে মূল্যায়ান পাচ্ছেন বিদেশের অন্যান্যরা এর চেয়ে বেশি মূল্যায়ন পাচ্ছেন। এর কারণ হল ওই প্রজেক্টে অংশ নেয়া বাইরের ব্যক্তিটিকে ট্রেইনআপ করে পাঠানো হয়েছে। এই কারণেই তিনি এগিয়ে গেছেন। ফলে আমাদের বেসিস থেকে এটি করার একটি চিন্তা মাথায় আছে আমার। এতে করে প্রযুক্তিতে দেশ এগিয়ে যাবে। আর্থিকভাবে আমরা লাভবান হবো।
দীর্ঘ সময় ধরে দেশের আইসিটি খাতে সফলতার সঙ্গে ব্যবসা করে আসছেন এ নারী উদ্যোক্তা। যাত্রাটা সহজ ছিল না। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে তাঁকে এ পর্যায়ে আসতে হয়েছে। এবিষয়ে রেজওয়ানা বলেন, আমি অনেক বাধা পেরিয়ে এতদূর এসেছি, কিছু একটা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। একজন উদ্যোক্তার জীবনে নানান বাধা, চ্যালেঞ্জ আসবেই। সব প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। হতাশ হলে সাফল্যের দেখা মিলবে না।
নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমি পজিটিভ। এবারের বেসিস নির্বাচনে অনেকেই অংশ নিয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় বেসিস একটি লেবেলে গেছে। যার কারণেই বেসিস থেকেই মন্ত্রী হয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার। তিনি থাকা অবস্থায় বেসিস যে লেভেলে ছিল, যাওয়ার পর বেসিস কিন্তু একটি অন্য লেবেলে চলে গেছে। আমার চিন্তা হল ইয়ুথ ও সিনিয়র লেভেল নিয়ে ভালো একটি কিছু করার। আমার কোম্পানীর এখন নিজে চলতে পাড়ার ক্ষমতা রয়েছে। ফলে আমি আমার দিক থেকে বেসিসকে দুইবছর সময় দিতে দিতে পারবো। আমার ভাবনা হচ্ছে এই দুই বছরের জন্য নির্বাচিত হলে বেসিসকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করা।
সদস্যদের উদ্দেশে বলতে চাই, ভোট ফর রাইট ক্যান্ডিডেট, যোগ্যতা দেখে বেসিসের মেম্বাররা যেন তাঁদের মূল্যবান ভোটটা সঠিক প্রার্থীকে দেন। বেসিস এখন জ্ঞানভিত্তিক ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়ে উঠেছে। এ ইন্ডাস্ট্রিকে পরিচালনার জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের ভীষণ প্রয়োজন। অযোগ্যদের হাতে আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দিলে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাবে না। আমি উদ্যোক্তা হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১৪ বছর ধরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে আসছি। বেসিস সদস্যরা যদি মনে করেন আমি যোগ্য তাহলে আমার যোগ্যতা যাচাই করেই যেন আমাকে তাঁদের মূল্যবান ভোটটা দেন।
বিবার্তা/উজ্জ্বল/হুমায়ুন/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]