শিরোনাম
‘বিল্যান্সারের নাম বললে একনামে চিনবে বাংলাদেশকে’
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০১৮, ১৭:১৬
‘বিল্যান্সারের নাম বললে একনামে চিনবে বাংলাদেশকে’
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

আমাদের দেশে অনেক মেধাবী ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তাঁরা আন্তর্জাতিক অনলাইন মার্কেটপ্লেস ফ্রিল্যান্সারডটকমে আউটর্সোসিং করে হাজার হাজার মার্কিন ডলার আয় করছেন। কিন্তু স্থানীয়ভাবে আউটর্সোসিং কাজ করার নিজস্ব কোনো অনলাইন মার্কেটপ্লেস নেই। এই চিন্তা মাথা চেপে বসে মো. শফিউল আলমের। দেশের ফ্র্যিলান্সারদের কথা চিন্তা করে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ‘আমার ডেস্ক’ নামে একটি দেশি অনলাইন মার্কেটপ্লেস শুরু করেন তরুণ এই উদ্যোক্তা। সময়ের আবর্তনে ‘আমার ডেস্ক’-এর নাম বদলে হয়ে যায় বিল্যান্সারডটকম (www.belancer.com)।


কথা হয় বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ‘বিল্যান্সার’-এর প্রতিষ্ঠাতা মো. শফিউল আলমের সাথে। জানালেন দেশীয় মার্কেটপ্লেসের শুরু থেকে বর্তমান হালচালের নানান কথা।


শফিউলের জন্ম ময়মনসিংহে। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে পাস করেন এইচএসসি। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে শুরু করেন ব্যস্ত জীবন।



শফিউল জানান, ওই সময় বাংলায় মোবাইল গেম তৈরি করেছি। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের সঙ্গে মোবাইল রেমিট্যান্স এবং বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক লেনদেন নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আরেকটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম সারা দেশের ডাকঘরগুলোকে আমূল বদলে দিতে, সেটা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি।


‘বিল্যান্সার’ এর পেছনের কথা জানতে চাইলে শফিউল বলেন, সময়টা ছিল ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট কিছু অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে আমরা কয়েক বন্ধু মিলে ‘আমার ডেস্ক’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করি। এখানে ইলেক্ট্রনিক পেইমেন্ট, মোবাইল ভ্যাস, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও আউটসোর্সিং কাজ করার ব্যবস্থা রয়েছে। অল্পদিনে কোম্পানির কাজগুলো স্থান করে নেয় ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, ইয়াহো ফাইন্যান্স, এমএসএন মানিসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।


তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সার মার্কেটপ্লেসের মতো এতো বড় একটি প্লাটফর্মের যে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ তা স্টার্ট-আপ উদ্যোগে সামলানো সম্ভব ছিলো না। বিশেষ করে সারাবিশ্বের বায়ার বা ক্লায়েন্টদের কাছে ব্যাপক ব্র্যান্ডিং, মার্কেটপ্লেসের নির্ভরযোগ্য কারিগরি সক্ষমতা, পেইমেন্ট পদ্ধতি, ইনভেস্টমেন্ট, ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লায়েন্টের আস্থা ও আগ্রহের তৈরি ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে সরকারি উদ্যোগের বিকল্প ছিলো না। বিষয়টা নিয়ে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সাথে কথা বললে তিনি বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং সাইটটি তৈরিতে সহযোগিতা করছেন। তিনিই ‘আমার ডেস্ক’ নামটি পরিবর্তন করে নাম দেন ‘বিল্যান্সার’। এরপর ১৭ মার্চ ‘বিল্যান্সার’ নামের ডোমেইনটি কেনা হয়।


ফ্রিল্যান্সাররা এখানে কাজ করবেন কেন, এখানে বিশেষ কি সুবিধা রয়েছে - এমন প্রশ্নের জবাবে শফিউল জানালেন, বাংলাদেশে এখন প্রায় ২০ লাখের মতো ফ্রিল্যান্সার অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ করছেন। বিদেশি ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে কাজের টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে একটু ঝামেলা পোহাতে হয়। বিল্যান্সারের সুবিধাটা এখানেই। কাজ করার পর টাকা পেতে কোনো ঝামেলা হবে না। বায়ার এখানে কাজ দেবেন (পোস্ট), ফ্রিল্যান্সাররা সে কাজের জন্য আবেদন করবেন। আবেদনের তালিকা থেকে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও পোর্টফোলিও দেখে সেরা কর্মী বাছাই করবেন নিয়োগদাতা। নতুন কোনো কাজ পোস্ট করার সময় নিয়োগদাতার কাছ থেকে মোট কাজের সমপরিমাণ টাকা তাঁর বিল্যান্সার অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। কাজ বুঝে পেলে তিনি কর্মীকে তার কাজের জন্য সেখান থেকে টাকা পরিশোধ করে দিতে পারেন। এতে কর্মী ও নিয়োগদাতা - উভয়েই আর্থিক প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পান। বিল্যান্সারে আয়ের উৎস দুই পক্ষই। কর্মী ও নিয়োগদাতা উভয়ের কাছ থেকে ৫ শতাংশ কেটে রাখা হয়।



বিল্যান্সার মুক্ত প্ল্যাটফর্ম হওয়ায় এখানে জালিয়াতির কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানালেন শফিউল। তিনি বলেন, বিল্যান্সার চালুর পর ওয়েবসাইটটিতে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল আইসিটি বিভাগের সহায়তায় সেগুলো দূর করে সবদিক থেকে বিশ্বমানের করা হয়েছে।


২০১৫ সালের ০১ মে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে দেশীয় এই অনলাইন মার্কেটপ্লেসটি। আড়াই বছরে সাইটটির পরিসর অনেক বড় হয়েছে। সাইটে দিন দিন বাড়ছে নতুন ফ্রিল্যান্সার ও কাজের সংখ্যা। বর্তমানে এখানে ৩২,২৮২ জন ফ্রিল্যান্সার এখানে কাজ করছেন। ৭,৭৪৬টি জব পোস্ট করা আছে। যেগুলোর আর্থিক মূল্যমান প্রায় এক কোটি ২৭ লাখ ১২,৫৯৩ টাকা। প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছেন ৪২,৩৭ জন কর্মী।


বিল্যান্সার তৈরির পেছনে যারা মেধা-শ্রম দিয়েছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শফিউল বলেন, মোজাফফর চৌধুরী, শামসুল আরেফিন, শেখর আহমেদ, আশিক আহমেদ, আজিজুর রহমান, রোহান রেজা, রহিম এম ইরতেজা, আনোয়ার হোসাইন, অনিন্দ্য আহমেদ, নাজমুস সাকিব, আসিফ চৌধুরী, আশরাফুল আলম ও জিয়াউর রহমানের আন্তরিক সহযোগিতা না পেলে হয়তো আজ এই অনলাইন মার্কেটপ্লেসটা গড়ে তোলা সম্ভব হতো না।


বিল্যান্সারের পেইমেন্ট সিস্টেম বিষয়ে শফিউল জানালেন, যেহেতু আমাদের মার্কেটপ্লেসটি লোকাল এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যামপ্লয়ারদের জন্য, তাই আমরা সকল ধরনের সুবিধাসম্বলিত পেমেন্ট সিস্টেম খোলা রেখেছি। লোকাল মার্কেটের জন্য অ্যামপ্লয়াররা অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে ভিসা, মাস্টার কার্ড, কিউ-ক্যাশ, বিকাশ, এমক্যাশ এবং অনলাইন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা ডিপোজিট করতে পারবেন এস্ক্রু অ্যাকাউন্টে। ইন্টারন্যাশনাল ক্লায়েন্টদের জন্য আমাদের ইতোমধ্যেই ইউএসএতে একটি পুর্ণাঙ্গ কম্পানি খোলা হয়েছে এবং পেপ্যালসহ সকল পেমেন্ট সুবিধা রাখা হয়েছে। এছাড়া ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ডিরেক্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হবে। আমাদের প্রেফার ব্যাংকে তাদের অ্যাকাউন্ট থাকলে এক দিনেই টাকা পেয়ে যাবেন আর বিদেশি অ্যামপ্লয়ারদের ক্ষেত্রে অন্যান্য মার্কেটপ্লেসগুলোর মতো কম্পিটিশন করা হবে।


তিনি বলেন, বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা ইতোমধ্যেই তাদের যোগ্যতা দিয়ে আন্তর্জাতিক মার্কটেপ্লেসে পজেটিভ ব্র্যান্ডিং করে রেখেছে। সেই সুবাদে আমরা এখন অনেক কাজ পাচ্ছি। ফ্রিল্যান্সিংয়ে সারা বিশ্বে আমরা তৃতীয় স্থানে আছি। তাই মার্কেটপ্লেসটাকে নিয়ে তার অনেক পরিকল্পনা।



শফিউল বলেন, আমাদের টার্গেট হচ্ছে লোকাল মার্কেট ডেভেলপ করার পাশাপাশি ব্যাপক পরিকল্পনার মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল অ্যামপ্লয়ারদেরকে সংযুক্ত করা। অবশ্য ইতোমধ্যেই এই ফিল্ডে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা অনেক ডেভেলপ করেছি। আরো করবো। আমরা চাই দেশীয় সাইটটি হোক ফ্রিল্যান্সারডটকমের মতো একটা আন্তর্জাতিক মানের মার্কেটপ্লেস, যেখানে কাজ করবে লাখ লাখ তরুণ-তরুণী। বিল্যান্সারের নাম বললে বিশ্বের মানুষ একনামে চিনবে বাংলাদেশকে।


বিবার্তা/উজ্জ্বল/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com