
ছোট্টবেলায় পাইলট হয়ে আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখলেও পরে কলেজ জীবনে এসে শিক্ষকতার প্রতি প্রবল টান অনুভব করেন। শিক্ষকতা পেশায় আসার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এবং ডিগ্রি নিয়ে হলেন শিক্ষক। জীবন চলছিল বেশ ভালোই। মনে মনে কী যেনএকটা অভাববোধ করছিলেন। কোনভাবেই তৃপ্ত হতে পারছিলেন না। তখন শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি সৃজনশীল কিছু একটা করার স্বপ্ন দেখেন। শুরু করেন ‘নীহারিকা’। আজ অনলাইনে ক্রেতাদের কাছে নীহারিকা ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
বলছিলাম নারীদের জন্য দেশি-বিদেশি প্রসাধনী এবং গহনা সামগ্রীর উদ্যোক্তা ‘নীহারিকা’র কর্ণধার শাহজীদা নাজনীন সুরভীর কথা। বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সনে প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি শখের বশে নিজের হাতে গহনা তৈরি করে সেগুলি অনলাইন শপে বিক্রি করতেন। অসংখ্য মানুষের পছন্দের, প্রিয় ব্র্যান্ড ও ভালোবাসার নাম ‘নীহারিকা’।
বগুড়াতে জন্ম হলেও রাজধানী ঢাকাতেই বেড়ে ওঠা সুরভীর। মা ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক। বাবাও একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে অবসর। দুই ভাই-বোনের মধ্যে সুরভী বড়।
তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে। মা-বাবার চাকরির সুবাদে চলে আসেন রাজধানী ঢাকায়। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পালা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পান। ঢাবির প্রতি আগে থেকেই আলাদা ভালোলাগা ছিল। তাছাড়া ঢাকাতেই ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠার কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি বিভাগে প্রথম হয়েও ভর্তি হননি সেখানে।
সুরভী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যাবো কোথায়? ভর্তি হলাম শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে। উঠি রোকেয়া হলে। প্রথম বর্ষ থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাথে জড়িয়ে যাই। পরে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পুরো সময়টা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থেকেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছি। পরে একই প্রতিষ্ঠানে প্রথমে ফিজিক্যাল সায়েন্স থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি অব এডুকেশন (বিএড), এরপর প্রাইমারি এডুকেশনে অনার্স এবং শেষে নন ফরমাল অ্যান্ড কন্টিনিউয়িং এডুকেশনে মাস্টার্স ডিগ্রি অব এডুকেশন (এমএড) পাস করি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে অনার্সে পড়বার সময় শিক্ষার্থীদেরকে হয় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত বিষয়ের উপর ইনটার্নশীপ করতে হয়, নয়তো শিক্ষা ও গবেষণা সম্পর্কিত কোন বিষয় নির্বাচন করে থিসিস করতে হয়। যেহেতু ব্যবহারিক ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা পেশাগত জীবনের কাজে আসবে, তাই তিনি ইন্টার্নশিপ বেছে নেন। প্রথমে অনার্সে ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি গার্লস স্কুলে (বুয়েট গার্লস স্কুল) ট্রেইনি টিচার হিসেবে বেশ কিছুদিন চাকরি করেন। পরবর্তীতে মাস্টার্সে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত গণযোগাযোগ অধিদফতরের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পে ইনটার্ন হিসেবে কাজ করেন। ব্রিটিশ কাউন্সিলে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবেও কাজের অভিজ্ঞতা আছে তার।
পড়াশোনা এবং ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি পার্টটাইম জবও করেছেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করে চাকরিক্ষেত্রে প্রবেশের পালা। বরাবরের মতোই ভালো ফলাফলের চাকরির খোঁজে বেশি দূর যেতে হয়নি তাকে। ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সনে বিজ্ঞান বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।
সুরভী বলেন, শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বরাবরই মনোযোগী ছিলাম। বিএড এবং এমএড-এও ভালো ফলাফল করায় নিজে পড়ালেখা করে আসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধীনেই চাকরিটা হয়ে গেল। নতুন চাকরি বেশ ভালোই চলছিল। কিছুদিন পর মনে হলো এর পাশাপাশি আরও কিছু করতে মন চাইছে। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে প্রতি অনুরাগ ছিল। ছবি আঁকাআঁকিতে ঝোঁক ছিল। ক্রাফটিংয়ের কাজ ভীষণ ভালো লাগত। বই পড়ার প্রচণ্ড নেশা ছিল। গাছপালা আর রান্না-বান্নার পেছনেও সময় দিতাম। তারপরেও আরও কিছু করতে মন চাইছিল। তখন হাতে তৈরি কাঠের এবং মেটালের গহনা ও ডিজাইন টিপ তৈরির দিকে ঝুঁকলাম। শিক্ষকতার পাশাপাশি সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে জীবনকে রাঙিয়ে তুলতে ছোট্ট অনলাইন ব্যবসাকে বেছে নেই।
প্রতিদিন ক্লাস নিয়ে বাসায় ফিরে সুরভী রাতে বসেন নিজের স্বপ্নের বাস্তবায়নে। পরিকল্পনা মোতাবেক অনলাইনে প্রডাক্টের ম্যাটেরিয়াল খোঁজা, সোর্সিং করা, কিভাবে তা তৈরি করতে হয় সেগুলো ইউটিউবে টিউটোরিয়াল, পিন্টারেস্ট ইত্যাদি দেখে দেখে আরো নিখুঁতভাবে শেখা শুরু করেন। পরে ম্যাটেরিয়াল কিনে বেশ কয়েকটি মডেলের গহনা তৈরি করেন। সেগুলো বিক্রির জন্য একটা ফেসবুকের পেজ খোলেন। নাম দেন- ‘নীহারিকা’। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু হয় অনলাইন উদ্যোগ ‘নীহারিকা’র।
‘নীহারিকা’ নামকরণের পেছনে রয়েছে ছোট্ট একটা ঘটনা। কলেজ জীবনের শুরুতে সুরভী ঠিক করে রেখেছিলেন যদি মেয়ে সন্তান হয়, নাম রাখবেন ‘নীহারিকা’। যদি তা নাও হয়, তাহলে কন্যাসন্তান দত্তক নেবার কথা ভেবে রেখেছিলেন। সেই ইচ্ছে থেকেই প্রতিষ্ঠানের নাম রাখেন ‘নীহারিকা’। ভাগ্যের কি খেলা, আল্লাহ্ তাকে মেয়ে সন্তানই দিলেন। এরপর তিনি সন্তানের নামও রেখেছেন ‘নীহারিকা’।
সুরভী বলেন, অনলাইনে একটু ঘেটেঘুটে পড়ে বুঝে, আইডিয়া করে নিজের মতো করে সব করতাম। প্রোডাক্টের ম্যাটেরিয়াল খোঁজা, সোর্সিং করা, আনা, হিসাব রাখা, লিস্ট করা, ব্রেইনস্টর্মিং করে নতুন কিছু বানানো, ফটোগ্রাফি, লোগো ডিজাইন, লোগো বসানো, এডিট করা, পোস্ট লেখা, ক্রেতার সাথে যোগাযোগ ও অ্যাডভারটাইজ করা, কাস্টমার ডিটেলস রাখা, পার্সেল প্যাক করা, পাঠানো, টাকার হিসেব রাখা, ফিডব্যাক নেয়া ইত্যাদি সবটাই একাহাতে করেছি।
সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ত, ওই নির্জন, শান্ত পরিবেশটাকে বেছে নিতেন তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য। শুরু থেকে নীহারিকার পুরো কাজটাই নিজের হাতে করতেন। হাতে তৈরি গহনাগুলো আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষীরা কিনেছেন। এভাবে নীহারিকার পণ্য দেদারসে বিক্রি হতে থাকে। যারা একবার কোনো পণ্য কিনেছেন তারা ব্যবহার করে খুশি হয়ে পুনরায় অর্ডার করেছেন। এভাবে ‘নীহারিকা’র পরিচিতি ও সুনাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বাড়ে ক্রেতার পরিসর, একটা সময়ে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও পৌঁছে যায় ‘নীহারিকা’র পণ্য।
দিনে শিক্ষকতা, রাতে পেশার বাকি কাজ সেরে স্বপ্নের উদ্যোগ, এভাবেই চলছিল। ২০১৯ সালে পারিবারিকভাবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট নোমান হোসেন তালুকদারের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। শুরু হয় নতুন জীবন। স্বামী, পরিবার, চাকরি ও নিজের স্বপ্নের উদ্যোগ সব একসাথে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন স্বপ্নবাজ এই উদ্যোক্তা।
সুরভীর উদ্যোগ বাস্তবায়নে শুরু থেকে তার মায়ের সমর্থন বেশ ছিল। যেকোনো পরিকল্পনা করার সময় মার সাথে শেয়ার করতেন। মা তাকে উৎসাহ দিতেন। বিয়ের পর স্বামী তার উদ্যোগ বাস্তবায়নে সব সময় পাশে ছিলেন, এখনও আছেন।
সুরভী বলেন, আমার পরিবারের মানুষজন বিশেষ করে আমার মা নাছিমা খানম রুলি এবং আমার জীবনসঙ্গী অ্যাড. নোমান হোসেন তালুকদার খুব করে সমর্থন দিয়েছেন আমার কাজগুলোতে। আমি আমার মতন করে সব ঠিক রেখে সামলে কাজ করে গেছি। আমি বরাবরই একরোখা, যা ঠিক মনে করি, তাই করি। কাজ করতে আমার ক্লান্তি নেই।
সুরভীর হাতে তৈরি গহনা এবং ম্যাটেরিয়ালসের ব্যাবসা তখন তুঙ্গে। গর্ভে আসে ভালোবাসার ফসল। তখনও রাত জেগে মনের মতো করে পছন্দের কাজ করতেন। উদ্যোক্তা জীবনের একটা ঘটনার কথা বলেন তিনি। তখনও জানতাম না অনাগত সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে। প্রেগনেন্সির যখন ৪/৫ মাস তখন শখ করে একটা উদ্যোক্তা মেলায় অংশগ্রহণ করি। মেলার অর্গানাইজাররা কোনরকম প্রচার না করেই ঠকিয়ে টাকা নিতে চেয়েছিল। বিষয়টা বুঝতে পেরে কল দিলাম ৯৯৯-এ। পুলিশ ডেকে অংশগ্রহণকারীদের সবার অধিকাংশ টাকা আদায় করিয়ে এরপর ছেড়েছি। ওইদিন সবাই বলছিলেন এমন অবস্থায় চাপ না নিতে। আবার অনেকেই সেদিন বলেছেন, আপনার মতো আপনার সন্তানও অনেক সাহসী হবে। করোনা এলো, গেলো। শেষদিকে যখন আর কিছু করার অবস্থায় ছিলাম না, তখন কাজ বন্ধ করে দেই। আল্লাহ আমাকে মেয়ে সন্তানই দিলেন আলহামদুলিল্লাহ। আমার স্বপ্নের রাজকন্যার নাম রাখলাম, ‘নীহারিকা’।
সিজারের পর মেয়েকে সময় দিতে উদ্যোক্তা জীবনের সব ধরনের কাজ বন্ধ করে দেন মা সুরভী। কেবল চাকরি চালিয়ে গেছেন। ২০২০-২১ সাল পুরোদমে বিশ্রাম নিয়ে সব গুছিয়ে ২০২২ সালে আবার নতুন করে উদ্যোগের কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। শুরু করতে গিয়ে দেখেন হাতে তৈরি কাজের চৌদ্দটা বাজিয়ে ফেলেছে কতিপয় উদ্যোক্ত। চিন্তা করেন অথেনটিক কোরিয়ান স্কিনকেয়ার এবং হেয়ারকেয়ার ব্র্যান্ডগুলো নিয়ে কাজ করলে কেমন হয়। যেই ভাবা, সেই কাজ।
সুরভী বলেন, আমি নিজেই প্রতিমাসে অনেক টাকার কসমেটিকস কিনি। এসব প্রোডাক্ট সব সময় অর্জিনালটা দেশে পাওয়া যায় না। আমার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ও চাকরির সুবাদে পরিচিত যারা আছেন, তারাও তো একইভাবে কসমেটিকস কিনেন। ভাবলাম আমি যদি অর্জিনাল কোরিয়ান ব্র্যান্ডগুলোর পণ্য নিয়ে আসি তাহলে অনেকেই নকল পণ্য ব্যবহারের ক্ষতির থেকে মুক্তি পাবেন। আমি যেহেতু বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলাম এবং বর্তমানেও রসায়ন বিষয়ে পাঠদান করছি, তাই কসমেটিকসের নানান উপাদানের সম্পর্কে পড়ে ভালো বুঝতে পারি। বেশ কয়েকমাস এসব প্রোডাক্ট নিয়ে স্টাডি করে খ্যাতনামা সব স্কিনকেয়ার এবং হেয়ারকেয়ার ব্র্যান্ডের অর্জিনাল কোরিয়ান প্রডাক্ট অনলাইন শপে বিক্রি শুরু করি। বিক্রিও বেশ ভালোই হচ্ছে। ‘নীহারিকা’র ফেসবুক গ্রুপ ও পেজে এসব প্রোডাক্ট পাওয়া যাচ্ছে। সেসাথে রয়েছে নিজস্ব ওয়েবসাইট। সেখানে সহজেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত প্রোডাক্টগুলো।
যারা পরিচিত, চেনেন, জানেন এবং ব্যক্তি সুরভীকে ফলো করেন ফেসবুকে বা ইনস্টাগ্রামে বেশিরভাগ ক্রেতাই তার প্রোডাক্ট কেনেন। বাংলাদেশের আবহাওয়া, ক্রেতার ত্বকের ধরণ, কেয়ার রুটিন এবং নানান সমস্যা শুনে এরপর এক্সপার্ট ওপিনিয়ন নিয়ে তবেই ক্রেতাদের প্রোডাক্ট সাজেস্ট করেন তিনি। ডাক্তার দেখাবার মতো কিছু হলে ডাক্তারও সাজেস্ট করেন। অনেকে গাদা গাদা পণ্য কিনতে চান, ব্যবহার করতে না পারলে তাদেরকে বুঝিয়ে যতটা দরকার ততটাই নিতে বলেন। ‘নীহারিকা’ অর্জিনাল প্রোডাক্ট দেয়ার নীতিতে অটল।
বর্তমানে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? জবাবে সুরভী বলেন, সময় যত যাচ্ছে, আমার প্রোডাক্টের প্রতি আস্থার পাল্লা ততই ভারি হচ্ছে। তিলে তিলে ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে উঠছে ‘নীহারিকা’। কোরিয়ান এসব পণ্যের গুণগত মান এবং কর্মক্ষমতা মুগ্ধ করেছে ক্রেতাদের।
একজন কলেজ প্রভাষক হয়েও গহনা তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করাতে কতিপয় সহকর্মীসহ পরিচিতদের অনেকেই সুরভীর এই সৃজনশীল কাজকে অপছন্দ করতেন। তার ভাষ্যমতে, প্রত্যেক মানুষের একটা নিজস্ব ভালোলাগার জগত থাকে, যেখানে কাজ করলে তার মনে শান্তি আসে, আনন্দ আসে, নিজেকে ভালো রাখা যায়। ‘নীহারিকা’ তার এমন ভালোবাসার জায়গা। কাজ ছোট-বড় যাই হোক না কেনো, কাজ তো কাজই। আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষ এই ভালোলাগার মূল্যটা বোঝেন না। সত্যি বলতে আমার এই কাজটাকে অনেকে ছোট করে দেখেছেন। সরাসরি বলেছেন, আপনি একজন শিক্ষক হয়েও এই কাজ করছেন কেন? একটা চাকরি করছেন। এটা করার দরকার কি?
সুরভীর মূল পেশা শিক্ষকতা হলেও পাশাপাশি ভালোলাগার জায়গা থেকে অনলাইনে ব্যবসা করছেন। তার ভাষ্য, আমি যেখানে চাকরি করছি, সেটা পুরো দায়িত্ব নিয়েই করছি। দায়িত্বের জায়গায় কখনও ব্যবসাকে টেনে আনিনি। এমনকি চাকরির ক্ষেত্রে ব্যবসার কোন প্রভাবও পড়েনি। তবে নিজের ফেসবুকে সব প্রোডাক্টের প্রচার-প্রচারণা, ব্র্যান্ডিং করা, প্রোডাক্টের অর্ডার নেয়া ও কাস্টমারদের সাথে প্রয়োজনীয় সব যোগাযোগ করার কারণে সহকর্মীরা বিষয়টা জেনেছেন। শিক্ষার্থীরা জেনেছেন। যারা এ বিষয়টি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন তারা আমার প্রোডাক্ট নিয়েছেন। কেউ কেউ আবার নেতিবাচকভাবে বিষয়টিকে দেখেছেন। তবে শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে নিজের ব্যবসায় বেশি সময় দিয়েছি বা দায়িত্ব পালনে কোনরকম অবহেলা করেছি, এটা কেউ কখনও বলতে পারবে না।
বাংলাদেশে এবং দেশের বাহিরে ‘নীহারিকা’কে একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান আত্মপ্রত্যয়ী এই উদ্যোক্তা। তার ভাষ্য, আমার এখন একই নামে দুই সন্তান। মেয়ে যেমন ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে, ঠিক তেমনি উদ্যোগও এগিয়ে যাচ্ছে। দুজনকে সময় দিয়ে, আদর, যত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে লালনপালন করে বড় করছি। ‘নীহারিকা’ ব্র্যান্ডকে একটু একটু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে পরিচিত করছি। পরিকল্পনা আছে সারাদেশের মানুষের কাছে নীহারিকার প্রোডাক্ট পৌঁছে দেবার। ইতোমধ্যেই নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে। একটা মোবাইল অ্যাপ তৈরির কাজ চলছে। অ্যাপের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে নীহারিকার প্রোডাক্ট পৌঁছে দিতে চাই। নীহারিকার একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এতে শুধু নারীদের প্রোডাক্টই রাখা হয় না, পুরুষদের প্রোডাক্টও রয়েছে। রয়েছে Innisfree, Skinfood, Missha, Laneige, Some by Mi, Ryo, farmstay, 3W clinic, paxmoly, Koelcia ইত্যাদির মতো খ্যাতনামা কোরিয়ান ব্র্যান্ডগুলোর প্রোডাক্ট। সংগে যুক্ত হচ্ছে ইউকে, ইউএসএ ব্র্যান্ডের কসমেটিকস, মেক আপ আইটেম এবং বেবিকেয়ার প্রোডাক্ট।
আপনারা সবাই আমার উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টার সাথে যুত্ক থাকবেন। সবাইকে ‘নীহারিকা’র (Niharika) গ্রুপ জয়েনের অনুরোধ রইল। নীহারিকার পক্ষ থেকে সবার প্রতি রইল অকৃত্রিম ভালোবাসা।
বিবার্তা/গমেজ/রোমেল/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]