শিরোনাম
ভর্তা বাহারকে নিয়ে রাখীর স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৮:২৯
ভর্তা বাহারকে নিয়ে রাখীর স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

সবার জীবনে একটা স্বপ্ন থাকে। ছোটবেলা থেকেই সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে সবাই নানান পরিকল্পনা করে। অন্য পাঁচটা মেয়ের মতো তারও একটা স্বপ্ন ছিল উদ্যোক্তা হওয়ার। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে সেই স্বপ্ন তার বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। পড়ালেখা শেষ করেই শুরু হয় সংসার জীবন। পরিবারে আসে নতুন অতিথি। তখনো উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার চিন্তাজুড়ে। বরাবরই চাকরির চেয়ে ব্যবসার প্রতি আগ্রহ ছিল তার বেশি। নিজে থেকে কিছু একটা করা। সেটা হোক ছোট বা বড়। এই চিন্তাটাই তাকে উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রেরণা দেয়। আজ স্বামী-সন্তান সামলে ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা করে সফল উদ্যোক্তা তিনি।


বলছিলাম ‘ভর্তা বাহার ও ফুড ক্যাটারিংয়ের স্বত্বাধিকারী ও সফল নারী উদ্যোক্তা রুবাইদা রিয়াত রাখীর কথা। তিনি ছোট থেকেই পরিবারের সাপোর্ট পেয়ে এতদূর এসেছেন। তবে উদ্যোক্তা হতে চাওয়ার স্বপ্ন ছিল আরো আগেই। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পেলেও বিয়ে সন্তান সব সামলে চাকরির সুযোগ পাননি।


রাখী জানান, ২০১৪-১৫ সালের দিকে ড্রেস আর পাঞ্জাবি নিয়ে প্রথম অনলাইন ব্যবসা শুরু করি। তখন অনলাইন ব্যবসা চালানো বর্তমান সময়ের মত এত সহজ ছিল না। পরিশ্রম ছিল খুব বেশি। পারিবারিক কারণে একটা সময়ে এসে সেটা বন্ধ করে দিতে হয়। কিন্তু নেশাটা থেকে যায়। আমি ঘর থেকে বের হতাম কম। বেশিরভাগ সময়ই অনলাইন থেকেই খাবার দাবার কেনাকাটা করতাম। এভাবেই একদিন মাথায় আইডিয়া আসে খাবার নিয়ে কাজ করলে কেমন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের মতো করে সেবা দিচ্ছে। আমার খাবারগুলো যদি একটু আলাদা করে পরিবেশন করি তাহলে কেমন হয়?


পোলাও কোরমা বিরিয়ানী তো অনেকেই রান্না করছে আর সেবা দিচ্ছে। আমি না হয় পোলাও কোরমার সাথে দেশী যতরকম খাবার আইটেম আছে সেগুলো নিয়ে কাজ করি। আমি একজন নারী। একজন গৃহিনী। জীবনের প্রয়োজনের তাগিদে তো প্রতিদিন কত কি রান্না করতেই হয়। তাহলে চেষ্টা করলে পরিকল্পনা অনুযায়ী কেন ব্যবসাটা পারবো না। না আমি পারবোই। ভাল করে পারবো। আর আমাকে পারতেই হবে। এই আত্মবিশ্বাস থেকেই শুরু করি অনলাইন ব্যবসার পরিকল্পানা। পরিকল্পনা অনুসারে শুরু করি প্রস্তুতি। সব আয়োজন শেষ করে প্রাথমিকভাবে ভাত, ভর্তা, বিভিন্ন রকম ভাজি-সবজি, ডাল, তরকারি সবরকম দৈনন্দিন খাবার নিয়ে যাত্রা শুরু করি ভর্তা বাহার ও ফুড ক্যাটারিংয়ের। প্রথমে অনেকেই নাক শিটকালে বা ভর্তা শুনে অবহেলা করলেও মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে অনেক মানুষই সেবা নিতে শুরু করেন।



‘ভর্তা বাহার ও ফুড ক্যাটারিংয়ের স্বত্বাধিকারী রুবাইদা রিয়াত রাখী


বাঙালির পছন্দের খাবার ডাল-ভাত, শাক-সবজির ভাজি, ভর্তা ও টাকটা সবজির তরকারি এসবই প্রায় সব মানুষের নিত্য দিনের খাবারের আইটেম। এই দেশীয় আইটেমকে ফোকাস করে যাত্রা শুরু হয় ভর্তা বাহার ও ফুড ক্যাটারিংয়ের। সেই যে শুরু আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। রাখীর ভাষ্য, সত্যি বলতে কী উদ্যোগটি যেদিন শুরু করেছিলাম শুধু আমার মা ছাড়া কাউকেই পজেটিভ বলতে শুনিনি। একেবারে অনেকটা জিরো ইনভেস্টমেন্টে আমি উদ্যোগটা শুরু করি। খুবই কম অর্থে এবং স্বল্প লাভে আমি আস্তে আস্তে শুরু করি। আমার প্রথম জেদ ছিল আমি কারো উপর নির্ভর হয়ে কোনো কাজে হাত দিবো না। নিজের যেটুকু সামর্থ্য আছে সেটুকুর সাথে কঠোর পরি শ্রম দিয়ে উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করবো।


ভর্তা বাহার ও ফুড ক্যাটারিং সেবা যাত্রার শুরু থেকেই সম্পূর্ণ হোমমেড রান্না করা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশন করে আসছে। প্রায় ৮৫ রকম ভর্তা, ১২ রকম ডাল, ১৫ রকম ভাজি, শাক-সবজি এবং মুখরোচক প্রায় ৫০ রকম তরকারি, ডেজার্ট, পিঠা, ফ্রোজেন ফুড আইটেমসহ গ্রাহকের পছন্দ মতো প্রায় সব ধরনের দেশী খাবার এখানে সরবারহ করা হয়। যেকোনো ছোট-বড় পার্টি, বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে রান্না-বান্না, অতিথি আপ্যায়নেসহ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সেবাও দিয়ে থাকে।


এছাড়াও ভর্তা বাহার ও ফুড ক্যাটারিং সার্ভিসের পক্ষ থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন অফিসের স্টাফদের জন্য দুপুরের খাবার ডেলিভারীসহ ব্যাচেলর প্যাকেজও দেয়া হয়ে থাকে।


এ বিষয়ে রাখী বলেন, আমাদের ক্যাটারিংয়ের সবচেয়ে দারুণ মজার বিষয় হলো আমরা সম্পূর্ণ ভাবে কাস্টমারের পছন্দমতো খাবার চয়েস করতে অর্থ্যাৎ কাস্টোমাইজেশান অপশনসটা দিচ্ছি। কাস্টমারের অনুষ্ঠানের খাবার রান্নাটি কেমন হবে, খুব বেশি ঝাল না কম ঝাল, তেল বেশি না কম সবকিছু পরিমাণসহ জেনে বুঝেই চেষ্টা করি নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরেই খাবারটা পাঠানোর।


একটা সময় দেশী খাবার নিয়ে কাজ করতে সবাই স্বাচ্ছন্দ বোধ করতো না। কিন্তু এখন অনেক উদ্যোক্তা এটা নিয়ে কাজ করছেন। তাদের কাজ দেখে খুব ভাল লাগে। কখনোই কারো কোনো প্রতিভাকে ছোট করে কেউ দেখবেন নাহ, বললেন রাখী। আমি বিশ্বাস করি মানুষ চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে। যে যেটাতে আগ্রহী এবং পারবে বলে বিশ্বাস, তার সাহস করে সেটি নিয়েই কাজে নেমে পড়া উচিত। যেমন আমার রান্না করতে ভাল লাগত আর সেটিকে পুঁজি করেই আমার উদ্যোগ শুরু করেছিলাম। আজ আমি সফল।



উদ্যোক্তা রুবাইদা রিয়াত রাখী


যারা রান্নার কাজে অনেক কিছু নষ্ট হবে বা কষ্ট বেশি ভেবে রান্নার প্রতিভা নিয়েও ঘরে বসে আছেন তাদের উদ্দেশ্যে রাখীর ভাষ্য, আপনারা সবাই সাহস করে কাজে নেমে পড়ুন, লেগে থাকুন। কাজকে ভালোবাসুন। চেষ্টা করুন। দেখবেন আপনিও সফল হয়ে গেছেন। আমি আজ আমার জায়গাতে সফল। ভবিষ্যতে আমি যখন আরো বড় পরিসরে উদ্যোগটাকে নিয়ে যাবো তখনও আমার হোমমেড খাবারগুলো আরো বেশি বেশি করে তৈরি করার চেষ্টা করবো।


রাখী বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আমার খাবার নিয়ে যাত্রা শুরুর প্রায় দুবছর হতে চলেছে। এরই মধ্যে ঢাকা শহরজুড়ে বেশ ভাল সাড়া পেয়েছি। আমি মনেপ্রাণে চাই পুরো দেশজুড়ে যেনো আমার খাবারগুলো ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের দেশে অঞ্চলভেদে নানান ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবার রয়েছে। যেগুলো অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে। অনেকেই সেসব খাবারের নামও পর্যন্ত জানেন না। আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের আহ্বান জানাই তারা যেনো এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী নাম জানা কিংবা নাম না জানা খাবারগুলো নিয়ে এগিয়ে আসেন। ইন্টারনেটের এই যুগে সবাই নিজ নিজ জেলা থেকে নিজেদের আঞ্চলিক খাবারগুলো নিয়ে এগিয়ে আসলে ৬৪টি জেলার খাবারগুলো একসাথে হবে খাবারের এক বিশাল সম্ভার।



সফল নারী উদ্যোক্তা রুবাইদা রিয়াত রাখী


উদ্যাক্তা জীবনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে রাখী একটা জিনিস খুব অনুভব করেছেন সেটি হলো প্রতিদিন জীবনের প্রয়োজনে বাইরে অফিস করা মানুষগুলো তাদের সময়ের অভাবে নিজের রান্নার জন্য সময়ে করে উঠতে পারেন না। হাজারো মানুষকে বাইরে হোটেলে বা রেস্টুরেন্ট দুপুরে খাবার খেতে হয়। তাই এসব মানুষের কথা চিন্তা করে ভর্তা বাহার ও ফুড ক্যাটারিং সেবাটি বিশেষভাবে চালিয়ে যান। সেই সাথে তার একটা ইচ্ছে ভবিষ্যতে ছোট-খাট একটা রেস্টুরেন্ট দেওয়ার। যেখানে পথশিশুদের দু’বেলা পেট ভরে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। ছিন্নমূল মানুষেরা পাবে দুবেলা পেট ভরে খাবারের নিশ্চয়তা।


দেশী খাবার নিয়ে আমার স্বপ্ন হলো, এই খাবারগুলোর গুণগতমান ও স্বাদ সম্পর্কে সারাদেশের মানুষ তথা বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরতে চাই। এগুলোকে খেয়ে সবাই যেন এগুলোকে চিনতে ও জানতে পারে। বাংলাদেশের মজার মজার রান্না করা খাবারগুলো সবাই চিনুক, জানুক, সবাই খাবারগুলো সম্পর্কে আগ্রহবোধ করুক। সেইসাথে আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের খাবারগুলো বিভিন্ন দেশ তাদের পছন্দের তালিকায় রাখুক। ইন্ডিয়ান, চাইনীজ, থাই, জাপানীজ ও কোরিয়ান ফুডসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খাবারের মতো বাংলাদেশী ফুডও সে তালিকায় স্থান করে নিক। আন্তর্জাতিক ১০০টা খাবারের তালিকায় বাংলাদেশী খাবারগুলোও হবে অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। বিশ্ববাসী তৃপ্তিসহকারে খাবে। সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।


বিবার্তা/গমেজ/জাই


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com